সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহবায়ক রফিউর রাব্বি বলেছেন, স্বাধীনতার আগে ও পরে কখনোই বিচার ব্যবস্থা এমন সরকার নিয়ন্ত্রিত ছিল না। আদালতকে সরকার ভিন্নমত দমনের হাতিয়ার বানিয়েছে। জনগণের টাকায় চলা পুলিশ বাহিনীকে জনগণের বিপক্ষ বানিয়েছে। রাষ্ট্র কাঠামো আজকে ভেতর থেকে ভেঙ্গে পড়েছে।
তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার ১৩১ মাস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় আলী আহাম্মদ চুনকা নগর মিলনায়তন প্রাঙ্গণে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত আলোক প্রজ্বালন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, প্রতিবেশিদের সহায়তায় ক্ষমতা ধরে রাখতে গিয়ে দেশের সার্বভৌমত্ব ও অর্থনীতিকে হুমকির মুখে ফেলেছে। গণতন্ত্র, ভোটাধিকার ও খেয়ে পড়ে টিকে থাকার অধিকার হাড়িয়ে মানুষ আজকে দুর্বিসহ পরিস্থিতিতে জীবনযাপন করছে।
তিনি বলেন, কয়েকদিন পর ত্বকী হত্যার ১১ বছর পূর্ণ হবে, অথচ আজো র্যাবের তৈরী করে রাখা অভিযোগপত্রটি আদালতে পেশ করা হয় নাই। ত্বকীর ঘাতকদের এই সরকার বারে বারে পুরস্কৃত করেছে। তিনি আরও বলেন, তিন দিন পর সাগর-রুনী হত্যার একযুগ পূর্ণ হচ্ছে। অথচ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তখন ৪৮ ঘন্টার মধ্যে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের কথা বলেছিলেন। আদালত থেকে ১০৫ বার সময় নিলেও অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয নাই। ঘাতকরা যখন সরকারের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থাকে তখন কোন অপরাধীকেই আইনের আওতায় আসতে হয় না। ত্বকী, সাগর-রুনী ও তনু হত্যার বিচার না করা ইতিহাসে এই সরকারের কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে।
সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্য সচিব হালিম আজাদ প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রাখেন, আপনি বলেছেন ত্বকীকে কারা হত্যা করেছে তিনি তা জানেন, তা হলে কেন ১১ বছরেও বিচার হবে না।
দৈনিক খবরের পাতার সম্পাদক ও নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এড. মাহাবুবুর রহমান মাসুম বলেন, ত্বকী হত্যার এই ১১ বছরে হত্যার নির্দেশদাতা শামীম ওসমান বিচার প্রক্রিয়াকে ভিন্ন খাতে নেয়ার বহু চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। সরকার ও প্রশাসনের সহায়তায় তাদের ক্যাডাররা নারায়ণগঞ্জবাসীকে জিম্মি করে রেখেছে। কিন্তু আমরা ত্বকী হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরবো না।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৬ মার্চ নগরীর শায়েস্তা খাঁ রোডের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হয় মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। দু’দিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী শাখা খাল থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বছরের ১২ নভেম্বর আজমেরী ওসমানের সহযোগী সুলতান শওকত ভ্রমর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে জানায়, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। এর পর থেকে ত্বকীর হত্যার বিচার শুরু ও চিহ্নিত আসামীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে প্রতি মাসের ৮ তারিখ আলোকপ্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করে আসছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট।
সংগঠনের সভাপতি জিয়াউল ইসলাম কাজলের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা জুয়েলের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল হক দীপু, বাসদ এর জেলা আহ্বায়ক নিখিল দাস, সিপিবি’র শহর সভাপতি আবদুল হাই শরীফ, ন্যাপ জেলা সাধারণ সম্পাদক এড. আওলাদ হোসেন, গণসংহতি আন্দোলন জেলা সমন্বয়ক তরিকুল সুজন, সামাজিক সংগঠন সমমনার সাবেক সভাপতি সভাপতি দুলাল সাহা প্রমুখ।