নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায় সশস্ত্র ডাকাতদের তান্ডব চলছে। গত ৯ দিনে ৮ বাড়িতে ডাকাতরা হানা দিয়ে অস্ত্রের মুখে পরিবারের লোকজনকে জিম্মি করে মূলবান মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে। রীতিমত নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুর নির্বাচনী এলাকায় ডাকাত আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
এদিকে একের পর এক ডাকাতির ঘটনায় রাতের বেলায় গ্রামবাসীর চোখে ঘুম নেই। ডাকাতি প্রতিরোধে স্থানীয় প্রশাসন যেন নির্বিকার। ফলে চাপা ক্ষোভ বিরাজমান ভুক্তভোগিসহ সাধারণ গ্রামবাসীর মধ্যে।
ভুক্তভোগী ও স্থানীয়দের তথ্যমতে, সবশেষ মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) দিবাগত রাতে উপজেলার দুপ্তারা ইউনিয়নের পাঁচগাও দক্ষিণ মোল্লাপাড়া এলাকার খোকন মুন্সির বাড়িতে ও প্রভাকরদী গ্রামে ইকবালের বাড়িতে সশস্ত্র ডাকাতদল হানা দেয়। এরমধ্যে প্রথমে রাত ২ টার দিকে ডাকাত দলের ১৫-২০ জনের সদস্যদল খোকন মুন্সির বাড়ির মেইনগেইটের তালা কেটে রুমের দরজা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে। শার্ট প্যান্ট পরিহিত মুখোশধারী ডাকাতদল বাড়ীর সকলকে দেশীয় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ ৭ হাজার টাকা ও ১৫ ভড়ি ওজনের বিভিন্ন স্বর্ণের অলঙ্কার লুটে পালিয়ে যায়। অপরদিকে রাত ৩ টার সময় প্রভাকরদী এলাকার ইকবালের বাড়িতে একই কায়দায় হানা দিয়ে ডাকাত দল রুমের ভিতরে প্রবেশ করে নগদ টাকা ৪ লক্ষ টাকা ও সাড়ে ৩ ভরি স্বর্ণালংকার লুটে নেয়।
এরআগে ১২ অক্টোবর দিবাগত রাতে উপজেলার সালমদী নয়াপাড়া, নরেংদী ও মনোহরদী গ্রামে এই ডাকাতির ঘটনা গুলো ঘটে। এতে আহত হয়েছে ২ জন। লুটে নিয়েছে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকারসহ কয়েক লক্ষ টাকার মালামাল। পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও গৃহকর্তা সুত্রে জানা গিয়েছিল, ঘটনার দিন রাত আড়াইটার দিকে ১০/ ১৫ জনের মুখোশ পরিহিত ডাকাতদল সালমদী নয়াপাড়া গ্রামের বেসরকারী চাকুরী জীবি রিপনের বাড়ীতে দরজা ভেঙ্গে ভিতরে ঢুকে তার মা সেতেরা বেগমকে পিটিয়ে গলায় ছুরি ধরে নগদ ৩ লাখ টাকা ও ৭ ভরি স্বর্ণালংকার লুটে নয়।
অপর দিকে ১০/১২ জনের অপর একটি ডাকাত দল একই রাতে ব্রাক্ষন্দী ইউনিয়নের নরেংদী গ্রামে নুর আলম সিকদারের বাড়ীতে হানা দিয়ে তার স্বজন হোসনাকে পিটিয়ে নগদ ১০ হাজার টাকা ও ১ ভরি স্বর্ণ ছিনিয়ে নেয়। পরে ডাকাত দল মনোহরদী বাজারের সংলগ্ন অটো চালক মাসকুরের বাড়ীতে হানা দিয়ে নগদ ৩০ হাজার টাকা ও ১ ভরি স্বর্ণ নিয়ে যায়।
এছাড়া ৯ অক্টোবর ভোর রাতে উপজেলার ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়নের ডহর মারুয়াদী গ্রামের ব্যবসায়ী শাহজাহান, দিগলদী গ্রামের রিয়াজ চৌধুরী এবং মনোহরদী গ্রামে আবুলের বাড়িতে এই ডাকাতরা হানা দেয়। শসস্ত্র ডাকাতদল অস্ত্রের মুখে পরিবারের সদস্যদের জিম্মি করে নগদ টাকাসহ মূল্যবান মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছিলেন, রাত পৌনে একটার দিকে ডহর মারুয়াদী গ্রামের ব্যবসায়ী শাহজাহানের টিনশেড বিল্ডিং এর জানালার গ্রিল কেটে রুমের দরজা ভেঙ্গে ঘরের ভিতর প্রবেশ করে। শর্ট প্যান্ট পরিহিত মুখোশধারী ডাকাতদল বাড়ীর সকলকে দেশীয় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ ১৫ হাজার টাকা ও তিনটি মোবাইল লুটে নেয়। একই রাত দেড়টার দিকে পার্শ্ববর্তী দিগলদী গ্রামের ব্যবসায়ী রিয়াজের বাড়ির গেইটের তালা ভেঙ্গে রুমের ভিতর প্রবেশ করে সকলকে দেশীয় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রিয়াজের হাত পা বেঁধে নগদ দেড় লক্ষ টাকা ৫ ভরি ওজনের বিভিন্ন স্বর্ণালংকার এবং তিনটি মোবাইল সেট লুটে নেয়। অপরদিকে রাত ৩ টার দিকে বড় মনোহরদী গ্রামের ব্যবসায়ী আবুলের বাড়িতে একই কায়দায় ডাকাত দল রুমের ভিতর প্রবেশ করে নগদ ৩ লাখ ১০ হাজার টাকা এবং দুই ভরি ওজনের বিভিন্ন স্বর্ণালংকার লুটে নেয়। ভুক্তভোগীরা জানান, অজ্ঞাত ডাকাতদের বয়স ১৮ থেকে ২২ বছরের মধ্যে হবে।
সদ্য যোগদান করা আড়াইহাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আহসান উল্লাহ জানান, মঙ্গলবার রাতে ডাকাতির খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। ডাকাতদের গ্রেফতারের চেস্টা চলছে।