নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের লক্ষ্যে মতামত নিতে দেশের ৬০ বিশিষ্ট নাগরিক ও পেশাজীবীকে চিঠি পাঠিয়ে আলোচনায় বসার আমন্ত্রণ জানিয়েছে সার্চ (অনুসন্ধান) কমিটি। বৃহস্পতিবার সার্চ কমিটির পক্ষে বিশিষ্ট নাগরিক ও পেশাজীবীদের চিঠি পাঠিয়েছেন সাচিবিক দায়িত্ব পালনে থাকা মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
সে অনুযায়ী, আজ (শনিবার) সকাল ১১টায় সার্চ কমিটি বিশিষ্টজনদের সঙ্গে প্রথম বৈঠকে বসতে যাচ্ছে। এই বৈঠকে আমন্ত্রণ পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব এম আবদুল আজিজ ও আলী ইমাম মজুমদার, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এএফ হাসান আরিফ, ফিদা এম. কামাল, আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, মুনসুরুল হক চৌধুরী, ব্যারিস্টার রোকনুদ্দিন মাহমুদ, এমকে রহমান, ড. শাহদীন মালিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. বোরহান উদ্দিন খান ও ড. আসিফ নজরুল, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এজি মাহমুদ আলী, অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, বিএসএমএমইউ’র সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান, বিএমএ সভাপতি মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নেতা অধ্যাপক মাকসুদ কামাল, এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমিন মুরশিদ ও ফেয়ার ইলেকশন মনিটরিং অ্যালায়েন্সের (ফেমা) সভাপতি মুনিরা খান।
দুপুর পৌনে একটায় বিশিষ্ট গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে দ্বিতীয় দফা বৈঠকে বসবে সার্চ কমিটি। এতে আমন্ত্রণ পাওয়া বিশিষ্টজনদের মধ্যে রয়েছেন- দৈনিক যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন, আজকের পত্রিকার সম্পাদক ড. গোলাম রহমান, একাত্তর টেলিভিশনের সিইও মোজাম্মেল হক, ইত্তেফাকের সম্পাদক তাসমিমা হোসেন, ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, দৈনিক জাগরণের সম্পাদক আবেদ খান, মাছরাঙা টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী, চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক একে আজাদ, স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, চ্যানেল আইয়ের শাইখ সিরাজ, জাতীয় প্রেস ক্লাব সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, এনটিভির বার্তা প্রধান জহিরুল আলম।
প্রসঙ্গত, সিইসি কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মেয়াদ ১৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হচ্ছে। এর আগেই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদকে। ইসি গঠনে নতুন আইন অনুযায়ী, গঠিত সার্চ কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে যোগ্য ব্যক্তিদের নাম প্রস্তাব করতে হবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে সম্প্রতি আইন পাশ করেছে জাতীয় সংসদ। আইনে বর্ণিত যোগ্যতা অনুযায়ী ব্যক্তিদের দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির নির্দেশনায় গত ৫ ফেব্রুয়ারি অনুসন্ধান (সার্চ) কমিটি গঠন হয়েছে। কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ওয়ায়দুল হাসান।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- হাইকোর্টের বিচারপতি এসএম কুদ্দুস জামান, বাংলাদেশের মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মুসলিম চৌধুরী, বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসাইন ও কথা সাহিত্যিক অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক।
পরের দিন (৬ ফেব্রুয়ারি) বিকালে সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে সার্চ কমিটি প্রথম বৈঠক করে। ওই বৈঠকে ইসি গঠনের জন্য দেশের সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে তাদের পছন্দের ১০ জনের নাম চাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সিইসিসহ নির্বাচন কমিশনের পাঁচটি পদে সুপারিশ করার জন্য ১০ জনের নাম প্রস্তাব করার আহ্বান জানায় সার্চ কমিটি।
এরপর ৮ ফেব্রুয়ারি বিকাল সাড়ে ৪টায় সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে সার্চ কমিটির সদস্যরা দ্বিতীয় দফায় বৈঠকে বসেন। বৈঠক শেষে রাত ৮টার দিকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব সাংবাদিকদের জানান, ইসি গঠনে মতামত নিতে দেশের ৫০-৬০ জন বিশিষ্ট নাগরিকের সঙ্গে বৈঠকে বসবে সার্চ কমিটি। তারই ধারাবাহিকতায় সার্চ কমিটি শনিবার বিশিষ্টজনদের সঙ্গে দুই দফায় বৈঠক করবে। তৃতীয় দফা বৈঠক হবে আগামী রোববার।
আইন অনুযায়ী সার্চ কমিটির হাতে ১৫ কার্যদিবস সময় আছে। সেই হিসাবে আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আইন অনুযায়ী নাম প্রস্তাবের সময় আছে। তবে এর আগেই সব প্রক্রিয়া শেষ করে রাষ্ট্রপতির কাছে নাম প্রস্তাব করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন কমিটি সংশ্লিষ্টরা।