রুদ্রবার্তা২৪.নেট: করোনা পরিস্থিতির কারণে দুই বছর বন্ধ ছিল হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মহাতীর্থ লাঙ্গলবন্দ স্নান উৎসব। তবে এবার সেই আয়োজন করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ ও বন্দরের সীমানা দিয়ে বয়ে যাওয়া লাঙ্গলবন্দের ব্রহ্মপুত্র নদে শুক্রবার (৮ এপ্রিল) শুরু হবে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র অষ্টমী স্নানোৎসব। লাখ লাখ তীর্থযাত্রী পাপ মুক্তির বাসনায় অংশ নিবেন এ স্নানোৎসবে।
করোনার কারণে দুই বছর বন্ধ থাকায় এবার পুণ্যার্থীর সংখ্যা বেশি হবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। শান্তিপূর্ণভাবে স্নানোৎসব সম্পন্ন করতে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের প থেকে নেয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এখানে আসা পুণ্যার্থীরাও জানিয়েছেন এবার নির্বিঘেœ বিভিন্ন ঘাটে তাদের স্নান সারতে পারবেন।
শুক্রবার রাত ৯টা ১৩ মিনিটে এই স্নানোৎসবের লগ্ন শুরু হবে। শনিবার রাত ১১টা ১৫ মিনিটে শেষ হবে। এ স্নান উৎসবকে কেন্দ্র করে তিনদিন ব্যাপী লোকজ মেলা শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে পুণ্যার্থীরা লাঙ্গলবন্ধ এলাকায় আসতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সোনারগাঁ ও বন্দর উপজেলার সীমানা ভাগ করে বয়ে গেছে ব্রহ্মপুত্র নদ। এ নদের তীরে অবস্থিত হিন্দুধর্মালম্বীদের তীর্থস্থান লাঙ্গলবন্দ। হিন্দু দেবতা পরশুরাম হিমালয়ের মানস সরোবরে গোসল করে পাপমুক্ত হন। লাঙ্গল দিয়ে চষে হিমালয় থেকে এ পানিকে ব্রহ্মপুত্র নদরূপে নামিয়ে আনেন সমভূমিতে। পৌরাণিক এ কাহিনীকে স্মরণ করে প্রতিবছর চৈত্রমাসে নির্ধারিত দিনে দেশ বিদেশের লাখ লাখ তীর্থযাত্রী পুন্যলাভের আশায় জড়ো হন। ‘হে মহাভাগ ব্রহ্মপুত্র হে লৌহিত্য তুমি আমার পাপ হরণ কর’ পবিত্র এ মন্ত্র উচ্চারনে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা প্রেমতলা, অন্নপূর্ণা, রাজ, কালীঘাটসহ ১৮ টি ঘাটে ও নদের বিভিন্নস্থানে স্নান উৎসবে যোগ দেয়।
পুণ্যতালাভের আশায় ব্র²পুত্র নদের এ স্নান উৎসবে বাংলাদেশের হিন্দু ধর্মালম্বীদের পাশাপাশি পাশ্ববর্তী ভারত, নেপাল, ভুটানসহ কয়েকেটি দেশের লোকজনও অংশ নেন। অষ্টমী স্নান উৎসবকে কেন্দ্র করে জমে উঠেছে তিনদিনব্যাপী মেলা। মেলায় নাগরদোলাসহ বাহারি রকমের পসরা সাজিয়ে বসেছে দোকানিরা। স্নানোৎসবে আসা পুণ্যার্থীরা জানান, পাপ মোচনের আশায় তারা এই ব্রহ্মপুত্র নদে স্নান করতে আসেন। পুণ্যার্থীদের স্বাস্থ্য সেবা, শুকনো খাবার, শিশুদের জন্য দুধ বিতরণসহ নানাভাবে সহায়তা করছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো। আয়োজকরা এবার নদীর কচুরিপানা পরিস্কার ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
স্নান উৎসব সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পুলিশ, র্যাব ও আনসারসহ প্রায় ২ হাজার আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্য কাজ করছে। উপর থেকে নজর রাখতে ওয়াচ টাওয়ার এবং সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করেন জেলা প্রশাসন। জেলা পুলিশের কন্ট্রোল রুমও খোলা হয়েছে। এছাড়া প্রশাসনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান থেকে তীর্থস্থানের পাশে বসানো হয়েছে অস্থায়ী ক্যাম্প। এসব ক্যাম্পে পুণ্যার্থীদের জন্য প্রাথমিক চিকিৎসা সেবাসহ তাদের বিশ্রামের ব্যাবস্থা করা হয়েছে। দুর্ঘটনা এড়াতে বা তাৎনিক ব্যাবস্থা গ্রহণের জন্য বিপুল সংখ্যক ফায়ার সার্ভিসের কর্মী নিয়োজিত রয়েছে।
২০১৫ সালে সরু রাস্তা ও অতিরিক্ত মানুষের চাপে স্নান উৎসবে আসা ১০ পুণ্যার্থী পদদলিত হয়ে মারা যায়। ওই বছরই সরকার লাঙ্গবন্দের উন্নয়নের জন্য মহাপরিকল্পনা নিয়ে ১২শ’ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়। এরই মধ্যে রাস্তা প্রশস্তকরণ ও ঘাট সংস্কার করা হয়েছে।