আন্তর্জাতিক ম্যাচ মানেই মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে ‘বিয়ে বাড়ি’র উৎসব! আলো ঝলমলে রঙ আর গ্যালারির উপচে পড়া দর্শক। কিন্তু করোনার এই দুঃসময়ে এবার যে এর কিছুই নেই। তারপরও বাংলাদেশ ঠিকই উড়ল। রঙের রোশনাই আর দর্শকের গগণবিদারি চিৎকার না থাকলেও ফের আনন্দের গল্প ঠিকই লিখল বাংলাদেশ। ক্রিকেটের মোড়ল ‘বিগ থ্রি’র অন্যতম অস্ট্রেলিয়ার দর্প ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে আবারও চূর্ণ করল টাইগাররা। তারুণ্যের জয়ধ্বনিতে দ্বিতীয় ম্যাচেও জয় তুলে নিলো বাংলাদেশ। এই প্রথম যে কোনো ধরনের ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়াকে টানা দুই ম্যাচে হারাল বাংলাদেশ।
আগের রাতেই এই মাঠে লেখা হয়েছে ইতিহাস। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ম্যাচে প্রথম জয় বলে কথা। প্রথম টি-টোয়েন্টি যেখানে শেষ করেছিল, সেখান থেকেই যেন শুরু দ্বিতীয়টি। বুধবার মিরপুরে বাংলাদেশ পেল ৫ উইকেটের জয়। ৫ ম্যাচ সিরিজে টাইগাররা এগিয়ে গেল ২-০ ব্যবধানে।
শুক্রবার তৃতীয় ম্যাচটিতে জিতলেই তো সিরিজ লাল-সবুজের। এরচেয়ে ভাল স্ক্রিপ্ট বোধ হয় লেখা অসম্ভব।
যদিও টস ভাগ্যটা এবারও সঙ্গে থাকল না মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের। আগের ম্যাচ টস জিতে বোলিং নেন অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক ম্যাথু ওয়েড। এবার ব্যাটিং। দুই সিরিজ মিলিয়ে টানা পাঁচ টসে হারলেন মাহমুদউল্লাহ। তবে অজিদের সিদ্ধান্তটা যৌক্তিক হতে দেয়নি বাংলাদেশের বোলাররা। অতিথি দল ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে তুলতে পারে মাত্র ১২১ রান।
তারপরও মিরপুরের স্লো আর টার্নিং উইকেটে বাংলাদেশ কী করে একটা শঙ্কা তো ছিলই। কিন্তু সেই অনিশ্চয়তা উড়িয়ে দিলেন ব্যাটসম্যানরা। বিশেষ করে শুরুতে সাকিব আল হাসান শেষ দিকে আফিফ হোসেন ধ্রুব আর নুরুল হাসান সোহান বুঝিয়ে দিলেন এবার দলে জায়গা করেই ছাড়বেন! বাংলাদেশ ১৮ ওভার ৪ বলে ৫ উইকেট হারিয়েই পেয়ে গেল মনে রাখার মতো আরেকটি জয়!
তবে অজিদের ইনিংস শেষ হতেই অবশ্য পরিসংখ্যান দিচ্ছিল মন ভালো করে দেওয়া এক তথ্য। আগে ব্যাট করে এটিই অস্ট্রেলিয়ার সর্বনিম্ন সংগ্রহ। আর ২০ ওভারে এত কম রানের লক্ষ্য নিয়ে এর আগে কখনোই হারেনি টাইগাররা। এবার সেই রেকর্ডটাই মজবুত হলো।
টি-টোয়েন্টিতে আগে ব্যাটিং করে পুরো ২০ ওভার খেলে অস্ট্রেলিয়ার সর্বনিম্ন স্কোর এটিই। এই পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে মিরপুরের মন্থর উইকেটে ঠিকঠাক ব্যাট করতে পারছে না সফরকারীরা। প্রথম ম্যাচের পর এদিনও শুধু সংগ্রাম করে গেলেন ব্যাটসম্যানরা।
অথচ এখানেই কি না টস জিতে দিনের আলোতে কিছুটা সময় ব্যাট করাটা যৌক্তিক মনে করেছিলেন অজি অধিনায়ক। কিন্তু এমন উইকেটে মুস্তাফিজুর রহমানকে সামাল দেওয়া তো আর সহজ নয়। তার সঙ্গে আরেক বাঁহাতি শরিফুল ইসলামও পেয়ে যান নিশানা। আগের ম্যাচেরসেরা নাসুম আহমেদ উইকেট না পেলেও সাকিব ছিলেন বেশ হিসাবি। এই বাঁহাতি স্পিনার ৪ ওভারে ২২ রানে নেন ১ উইকেট।
মুস্তাফিজ অবশ্য এদিন পেয়ে যেতে পারতেন হ্যাটট্রিক। আক্রমণাত্মক হয়ে উঠা ম্যাথু ওয়েডের উইকেট উপড়ে শুরু করেন তিনি। এরপরের বলে তুলেন অ্যাশটন অ্যাগারের উইকেট। গুড লেংথ বল কাট করতে গিয়ে ব্যর্থ অজি ব্যাটসম্যান। বল ব্যাট ছুঁয়ে জমা পড়ে নুরুল হাসান সোহানের গ্লাভসে। তবে মুস্তাফিজের হ্যাটট্রিক অবশ্য আটকে দেন মিচেল স্টার্ক। শেষ দিকে অপরাজিত ১৩ রানও তুলে তিনি। তবে দ্য ফিজের বোলিং ফিগারটাও ছিল দেখার মতো ৪-০-২৩-৩!
আর শরিফুলও বুঝিয়ে দিচ্ছেন তিনি কতটা কার্যকর। ৪ ওভারে ২৭ রান দেন তিনি। টাইগার বোলারদের দাপটেই অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসে ছিল না কোনো ফিফটি। দলীয় সর্বোচ্চ ৪৫ রান করেন মিচেল মার্শ। এছাড়া মোইজেস হেনরিকেস যা একটু লড়লেন। সাকিবের বলে স্লগ করতে গিয়ে বোল্ড তিনি। তার আগে করেন ৩০।
জবাব দিতে নেমে দ্রুত রান তোলার কথা ভাবার সুযোগই ছিল না। সেই পথেও হাঁটেনি বাংলাদেশ। কিন্তু সৌম্য সরকার ২ বল খেলে কোন রান না করে ফিরতেই শঙ্কার মেঘ জমে ছোট্ট টার্গেট টপকাতে পারবে তো বাংলাদেশ? তারপর নাঈম শেখ ৯ রানে তার পিছু নিলে নীরবতা নেমে আসে মিরপুরের প্রেসবক্সেও। তবে এরপরই সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান পাল্টে দেন দৃশ্যপট। তার হতে ধরেই ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ।
সাকিব চটজলদি ১৭ বলে ২৬ রান তুলে ফেরেন। আর মেহেদীর ব্যাটে ২৪ বলে ২৩। মাঝে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ফিরলেও বাকি কাজটুকু সারেন আফিফ হোসেন ও নুরুল হাসান সোহান। তাদের দাপটে ৮ বল বাকি জয়ের বন্দরে বাংলাদেশ।
তিন চারে ২১ বলের ২২ রানে অপরাজিত সোহান। আফিফ ৩১ বলে অপরাজিত ৩৭ রানে। পাঁচটি চারের সঙ্গে এক ছক্কার ইনিংসে তিনিই ম্যাচসেরা। সিরিজে বাংলাদেশ ২, অস্ট্রেলিয়া ০। এবার সিরিজ জয়ের পালা। শুক্রবারই হয়তো ম্যাচের সঙ্গে সিরিজের ট্রফিটাও জিতে নিতে পারে মাহমুদউল্লাহর দল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
অস্ট্রেলিয়া: ২০ ওভারে ১২১/৭ (ফিলিপে ১০, ক্যারি ১১, মার্শ ৪৫, হেনরিকেস ৩০, ওয়েড ৪, টার্নার ৩, অ্যাগার ০, স্টার্ক ১৩*, টাই ৩*; মেহেদি ১/১২, সাকিব ১/২২, মুস্তাফিজ ৩/২৩, শরিফুল ২/২৭)
বাংলাদেশ: ১৮.৪ ওভারে ১২৩/৫ (নাঈম ৯, সৌম্য ০, সাকিব ২৬, মেহেদি ২৩, মাহমুদউল্লাহ ০, আফিফ ৩৭*, সোহান ২২*; স্টার্ক ১/২৮, হেইজেলউড ১/২১, অ্যাগার ১/১৭, জ্যাম্পা ১/২৪, টাই ১/২৭)
ফল: বাংলাদেশ ৫ উইকেটে জয়ী
ম্যাচসেরা : আফিফ হোসেন
সিরিজ : ৫ ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজে বাংলাদেশ ২-০তে এগিয়ে।