‘উপরে আছে আমাদের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আল আমিন, নিচে আমাদের উছিলা আছেন শেখ হাসিনা। এবং জনগণ হচ্ছে সকল ক্ষমতার উৎস। আজকে ২১ আগস্ট। আজ থেকে ২১ বছর আগে নারায়ণগঞ্জে একটি ঘটনা ঘটেছিলো, ১৬ জুন ২০০১। নিজের কাছে অপরাধবোধ হয়, মাফ করতে পারি না। অপরাধ করেছিলাম স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলে, মুক্তিযোদ্ধার ঘরে জন্ম নিয়ে। অপরাধ করেছিলাম কারণ সত্যকে সত্য ও মিথ্যাকে মিথ্যা বলতে শিখেছিলাম। বেশি কিছু করিনি, শুধু বলেছিলাম এ নারায়ণগঞ্জের পবিত্র মাটি যেখানে আওয়ামী লীগের জন্ম, যেখানে ভাষা আন্দোলন শুরু সেখানে বলেছিলাম নারায়ণগঞ্জের পবিত্র মাটিতে স্বাধীনতাবিরোধীদের প্রবেশ নিষেধ।’
`এ অপরাধে আওয়ামী লীগ অফিসে আরডিএক্স দিয়ে হামলা করা হলো। আমাদের হাত-পা বিকল হয়ে গেল। আমাদের অপরাধ কী। আমাদের ২০ জন মানুষ যে মরল তারা কী মানুষ না। তখন আমার জ্ঞান ছিল না। হাসপাতালে নেওয়ার পর আমি জানতাম না কয়জন মারা গেছে। জ্ঞান ফেরার পর শুধু একটা কথাই বলেছিলাম শেখ হাসিনাকে বাঁচান। আমি বলিনি আমাকে বাঁচাও কষ্ট হচ্ছে। আমি বলেছি শেখ হাসিনকে বাঁচান। কারণ আমি উপলব্দি করেছিলাম আমি মারা গেলে কিছু হবে না তবে শেখ হাসিনা না থাকলে বাংলাদেশ থাকবে না। এ বোমা হামলার দায়ও আমাদের দেওয়া হলো। আমাদের অত্যাচার করা হলো।’
রবিবার (২১ আগস্ট) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের তল্লা এলাকায় জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে, আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, এখানেও ষড়যন্ত্র হয়, খেলা হয়। যারা খেলছেন এতদিন চুপ ছিলাম। ধৈর্যের একটা সীমা আছে। সামাল দিয়ে চলেন। রাজপথ দখল করবেন করেন। আমরা বসে আছি আপনাদের সঙ্গে খেলার জন্য। রাজাকারের সন্তানদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের খেলা হবে। সে খেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানরাই জিতবে।’
বিএনপিকে উদ্যেশ্য করে প্রধানমন্ত্রীকে শামীম ওসমান বলেন, কেন তাদের চায়ের দাওয়াত দেন। যারা আপনাকে হত্যার চেষ্টা করেছিল তাদের আপনি চায়ের দাওয়াত দিতে পারেন না। কী ঠেকা পড়েছে আমাদের যে গণতন্ত্রের চর্চা করতে হবে। আমাদের ঠেকা পড়েনি গণতন্ত্র চর্চা করার। যারা দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র বানাতে চায় তাদের কেন চায়ের দাওয়াত দিচ্ছেন। আপনি এখন বাংলাদেশের সম্পদ।
এমপি বলেন, আমরা তো ক্ষমতায় আছি। কাউকে তো মারলাম না, ধরলাম না। কারণ শেখ হাসিনা বলেছিলেন আমি সব হারিয়ে ধৈর্য ধরেছি। তোমরাও ধৈর্য ধরো। আমি জাতির পিতার কন্যার উদ্দেশে বলছি ধৈর্যের সীমা আছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মেরে ফেলা হয়েছে। তার কন্যাকে বেঁচে যাওয়ার অপরাধে ২১ বার মারার চেষ্টা করা হয়েছে। আজ বাংলাদেশে মানবাধিকারের কথা শুনি। কোথায় ছিল সেদিন মানবাধিকার। জাতিসংঘ থেকে মানবাধিকার শেখাতে আসছেন। রোহিঙ্গাদের পাঠিয়ে দিয়েছে সেখানে তো মানবাধিকার দেখালেন না।
তিনি বলেন, জাতির পিতা আর ১৫-২০ বছর পেলে বাংলাদেশ জাপানের মতো দেশ হওয়ার কথা ছিল। আমাদের তো সোনার শরীর পুড়িয়ে বিদেশে কাজ করার কথা না। তারা আমাদের মতো যারা কিশোর ছিল তাদের স্বপ্নকে হত্যা করেছিল। তারপরও তাদের শান্তি হয়নি।
শামীম ওসমান বলেন, বঙ্গবন্ধুকে মারার পর আমাদের স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। শেখ হাসিনা বাচ্চাদের স্বপ্ন। আজ আবারও ষড়যন্ত্র হচ্ছে। বিএনপির মহাসচিব ফখরুল সাহেব হাসতে হাসতে বললেন সরকার চোখে সর্ষে ফুল দেখবে। বাংলাদেশ নাকি শ্রীলঙ্কার মতো দেউলিয়া হয়ে যাবে। এতে তো আপনার খুশি হওয়ার কথা না। দুঃখ-কষ্ট পাওয়ার কথা।
নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী যুবলীগের নেতা জানে আলম বিপ্লবের সভাপতিত্বে এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কাশীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম. সাইফ উল্লা বাদল, ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বক্তাবলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম, শওকত আলী। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজাম, জেলা শ্রমিক লীগের আহবায়ক আব্দুল কাদির, নারায়ণগঞ্জ মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি মো. জুয়েল হোসেনসহ নেতৃবৃন্দ।