নারায়ণগঞ্জের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ সরকারি তোলারাম কলেজের ক্যাম্পাসে টানা ১৭ বছরের বেশি সময় ধরে অবৈধ অবস্থান ও ছাত্র সংসদ অবৈধভাবে দখলে রাখা ও সেখানে প্রভাব বিস্তার করার অভিযোগ উঠেছে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে।
ছাত্র সংসদের নির্বাচন না হলেও কিংবা ছাত্র প্রতিনিধি না হলেও দীর্ঘ এ সময়ে ছাত্রলীগের প্রতিনিধি ও নেতাকর্মীরা পুরো কলেজ ক্যাম্পাস দখলে রাখে এবং সেখানে প্রভাব বিস্তার করে দলীয় বিভিন্ন কার্যক্রম সেখানে পরিচালনা করা, ভিন্ন মতের নেতাকর্মীদের এনে মারধর করা, শিক্ষকদের কাছ থেকে অর্থ আদায়সহ নানা অভিযোগ আছে সংগঠনটির বিরুদ্ধে।
কলেজের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের টেন্ডার নেওয়া, কলেজে ও বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে অনুষ্ঠানের নামে ও বিভিন্ন সময়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ভুড়িভোজের জন্য ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন দলীয় কর্মসূচি পালনের জন্য কলেজের বিভিন্ন পর্যায় থেকে, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে।
কলেজ সংসদ দখল করে সেখানে দিনরাত দলীয় ক্যাডারদের নিয়ে অবস্থান করা ও দলীয় কর্মসূচিতে জোর করে ছাত্রছাত্রীদের শ্রেণিকক্ষ থেকে ভয় দেখিয়ে ডেকে কর্মসূচিতে নিয়ে যাওয়া ছিল তাদের নিয়মিত কার্যক্রম। প্রায় সময় মধ্যরাতেও কলেজের সংসদে তাদের অবস্থান করতে দেখা যেত।
সরকারি তোলারাম কলেজ ছাত্রদল নেতা ও মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক আজিজুল ইসলাম রাজীব বলেন, কলেজে একবার প্রথম মেয়াদে টিটু দ্বিতীয় মেয়াদে শামীম ওসমানের ক্যাডার হাবিবুর রহমান রিয়াদ নিজেকে ভিপি পরিচয় দিয়ে ছাত্র সংসদ ও কলেজ ক্যাম্পাস দখল করে। কিন্তু তারা তা না। কারণ এটি হতে হবে নির্বাচনের মাধ্যমে। সারাদেশে ছাত্র ক্যাম্পাসগুলো তারা দখলে রাখতো। এখানেও ব্যতিক্রম হয়নি। ক্ষমতার জোরে প্রশাসনকে হাতিয়ার বানিয়ে তারা কলেজে ভয়ের রাজত্ব কায়েম করে। কলেজে নতুন ভবন উঠাতে টেন্ডার দিতে হতো তাদের। বিরোধী মতের কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হতো না ক্যাম্পাসে। পরীক্ষার হল থেকেও বিরোধী মতের নেতাকর্মীদের বের করে দেওয়া ও মারধর করার মতো ঘটনাও ঘটায় তারা। তাদের দমন পীড়ন করতো তারা সংসদে ডেকে এনে।
তিনি বলেন, কখনো আর তাদের মতো সন্ত্রাসী সংগঠনকে আমরা আর জায়গা দেব না ক্যাম্পাসে। এখানে এখন চমৎকার সম্প্রীতি আছে সকল ছাত্র সংগঠন ও শিক্ষার্থীদের। লেখাপড়া হচ্ছে, ক্রীড়া চলছে। আমাদের শিক্ষাবাসের সমস্যাগুলো আমরা আলোচনা করছি। উৎসবমুখর পরিবেশে এখন কলেজে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। এখানে কোনো সন্ত্রাসী কার্যক্রম আর নেই। আর সব অবৈধ দখলকারীরা, অবস্থানকারীরা ৫ আগস্টের পর পালিয়ে গেছে।
কলেজের অধ্যক্ষ বিমল চন্দ্র দাস ছাত্রলীগের অবৈধ অবস্থান ও কর্মকাণ্ডের বিষয়ে বলেন, আমি একটা লিগেসি পেয়েছি যেটা আগে থেকেই চলে আসছিল। আমি কিছু করতে গেলে প্রিন্সিপাল তো দূরের কথা, হয়ত নারায়ণগঞ্জেই থাকতে পারতাম না। তবে আমি যতটুকু সম্ভব আগের ফেসিলিটিগুলো কম দিতে চেষ্টা করেছি। কম দেওয়া হতো কিন্তু অনুষ্ঠানগুলোতে টাকা দেওয়া হতো। ধরুন কলেজের একটা অনুষ্ঠান হবে। সেই অনুষ্ঠানে ওরা কিছু ডিমান্ড করতো। তার কর্মী বাহিনীকে হয়ত কিছু খাওয়াবে। তারা বলতো, স্যার আমাদের তো এমনি খাওয়াবেন, আমাদের খাবার না দিয়ে টাকা দিয়ে দিয়েন। ওই রকম আরকি, তেমন কিছু না।
ভবন নির্মাণসহ বিভিন্ন টেন্ডার ছাত্রলীগ পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমার আমলে কোনো ভবন নির্মাণ হয়নি। দশ তলা একটা ভবন অনেক বছর ধরেই কাজ চলছিল। সম্প্রতি একটি ভবনে কাজ শুরু হয়েছে, সেটা হলো ইডির আন্ডারে। এটায় আমাদের কাজ করার কোনো সুযোগ নেই। এগুলো ওরা টাকা নিয়ে থাকলেও ঠিকাদারদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে।
তিনি বলেন, আমি চেষ্টা করছি সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে চলতে। সবার সমান অধিকার নিশ্চিত করতে চেষ্টা করছি। আগে হয়ত বাস্তবতার কারণে এটা হয়ে ওঠেনি।
ছাত্র সংসদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা সংসদ বাবদ টাকা যেহেতু নিচ্ছি না সুতরাং সংসদ বিলুপ্ত। আগে ওরা তো জোর জবরদস্তি করে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মতো কাজ করেছে। আমি এখানে দেড় বছরের মতো হলো যোগ দিয়েছি, আমি এসে এমনই পেয়েছি, আমার আমলে তো আর ওরা বসেনি। আমি চেক দিতে চেষ্টা করেছি কিন্তু কিছু দালালের কারণে আমি পারিনি। এর কারণেই আমি এখনও এ কলেজে আছি। ট্রান্সফারের পরেও ছাত্ররা আমাকে ফিরিয়ে এনেছে।
কলেজ সংসদের সর্বশেষ নির্বাচিত ভিপি ও জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মাসুকুল ইসলাম রাজীব বলেন, এখানে তো আপনারা জানেন দীর্ঘদিন এখানে যা হয়েছে তা কোনোভাবে গণতন্ত্র কিংবা রাজনীতি নয়। এটি ছিল একটি জবরদখল। এখানে শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত হয়েছিল এতদিন। শিক্ষাক্ষেত্রে সুন্দর পরিবেশে ফিরে আসতে শুরু করেছে। (বাংলানিউজ২৪.কম)