
নারায়ণগঞ্জের অধিকাংশ ইউনিয়ন পরিষদের মেয়াদ শেষ। করোনা পরিস্থিতির কারনে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হচ্ছে না। সারাদেশে ১৭৩টি ইউনিয়নে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েও করোনার কারনে স্থগিত করা হয়। তবে নারায়ণগঞ্জেও থেমে নেই সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা ও নির্বাচনী প্রস্তুতি। যাদের মধ্যে তরুণ প্রজন্মের ৫জন চেয়ারম্যান প্রার্থী বেশ আলোচিত হয়েছেন। যাদের নিজ নিজ ইউনিযনে অনেক প্রভাবশালী নেতারা থাকলেও সেইসব ইউনিয়নে এসব তরুণ প্রজন্মের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। যাদেরকে পেছন থেকে দমানোর চেষ্টা করা হলেও নির্বাচনী মাঠ গরম করেছেন।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইউনিয়ন হলো মোগরাপাড়া। এখানে বর্তমান চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন আরিফ মাসুদ বাবু। তিনি গত নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে জয়ী হোন। তার ভাতিজা সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ অআল কায়সার হাসনাত এবং তার ভাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন। এই ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দা বর্তমান এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম, কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ নেতা এএইচএম মাসুদ দুলালের মত অনেক নেতার। দীর্ঘদিন হাসনাত পরিবারের নিয়ন্ত্রনে এই ইউনিয়ন পরিষদটি। এবার সামনের নির্বাচনের নৌকা প্রতীকের প্রত্যাশা নিয়ে নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি শাহ মোহাম্মদ সোহাগ রনি। পুরোদস্তর নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায় সোহাগ রনি বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। সোহাগ রনি নির্বাচনী ঘোষণা দেয়ার পর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন একটি সংবাদ সম্মেলনও করেছিলেন। যেখানে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু ও জেলা পরিষদের সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম। তারপরেও থমকে নেই সোহাগ রনি। করোনা পরিস্থতিতেও ইউনিয়নবাসীর মাঝে দাঁড়িয়েছেন জোরালোভাবে।
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার আলীরটেক ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মতিউর রহমান মতি। গত নির্বাচনে তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় চেয়ারম্যান হোন। সম্প্রতি স্থানীয় এমপি একেএম সেলিম ওসমান আলীরটেক ইউনিয়নে এক মতবিনিময় সভায় মতিউর রহমান মতিকে আবারো সমর্থন ঘোষণা দেন। ওই ঘোষণার পর আলীরটেক ইউনিয়নের হাজার হাজার লোকজন তরুণ প্রজন্মের চেয়ারম্যান প্রার্থী সায়েম আহাম্মেদকে নিয়ে নির্বাচনের দাবিতে ও নির্বাচনে সুষ্ঠুু ভোটের দাবিতে আন্দোলনে নামেন। বেশকটি শোডাউন দিয়ে নির্বাচনের দাবিতে কর্মসূচি পালন করেন আলীরটেক ইউনিয়নবাসী। নিয়মিত আলীরটেক ইউনিয়নে নির্বাচনী প্রচার প্র্রচারণা চালিয়ে আসছেন সায়েম আহাম্মেদ। আওয়ামীলীগের বৃহত্তর অংশের নেতাকর্মীরা এখন সায়েম আহাম্মেদের পক্ষে নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন।
সোনারগাঁও উপজেলার জামপুর ইউনিয়ন পরিষদের আগামী নির্বাচনে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন আশরাফুল ভুঁইয়া মাকসুদ। ইতিমধ্যে জামপুর ইউনিয়ন জাতীয়পার্টির নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে সকলের মতামতের ভিত্তিতে মাকসুদকে চেয়ারম্যান প্রার্থী ঘোষণা করেছেন স্থানীয় এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা। করোনাকালে অসহায় মানুষের মাঝে মাকসুদের ভুমিকা বেশ জোরালো। এই ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন হা-মীম শিকদার শিপলুু। গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে শিপলু চেয়ারম্যান নির্বাচিত হোন। তবে ওই নির্বাচনে জেলা জাতীয়পার্টির সদস্য সচিব আবু হানিফ ভুঁইয়াকে জাতীয়পার্টি সমর্থন দিয়েছিল। কিন্তু ভোটের ফলাফল নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছে জাতীয়পার্টি। নেতাকর্মীদের অনেকেই সান নারায়ণগঞ্জের কাছে বলেছেন, এবার শক্ত প্রার্থী দেয়া হয়েছে।
আড়াইহাজার উপজেলার হাইজাদী ইউনিয়ন পরিষদের আগামী নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন তরুণ প্রজন্মের জোনায়েদ ভুঁইয়া প্রিন্স। এখানে চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য আলী হোসাইন ভুঁইয়া। আলী হোসাইন ভুঁইয়ার আপন ভাই জেলা পরিষদের সদস্য ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি সিরাজুল ইসলাম ভুঁইয়া। জোনায়েদ ভুঁইয়া প্রিন্স নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে মাঠে নামার পরপরেই দুই গ্রুপের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। একটি মামলায় প্রিন্স গ্রেপ্তার হয়ে কারাভোগও করেছেন। ফলে ওই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে আলোচিত হয়ে ওঠেছেন প্রিন্স।
সোনারগাঁও উপজেলার সাদিপুর ইউনিয়নের আগামী নির্বাচনে তরুণ প্রজন্মের চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে বেশ আলোচিত হয়ে ওঠেছেন ঢাকা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা জাকির হোসাইন। তার বড় ভাই আলী হোসাইন একজন শিল্পপতি। এখানে বর্তমানে চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন প্রবীণ আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুর রশিদ ভুঁইয়া। তিনি আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাতের অনুগামী হিসেবে রাজনীতি করেন। এখানে জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. আবু জাফর চৌধুরী বিরুকে জাকির হোসাইনের বেশকটি কর্মসূচিতে দেখা গেছে। মুলত বিরুর সমর্থনেই পুুরোদস্তর নির্বাচনী মাঠে জাকির হোসাইন।