প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সবসময় দেশে ও বিদেশে মানুষের পাশে দাঁড়ায়। গতকাল বুধবার ঢাকা সেনানিবাসের সদর দফতরে প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের (পিজিআর) ৪৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এমন কথা বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী রেজিমেন্টের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পিজিআর এর সকল সদস্যকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
প্র্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রতিটি বাহিনী দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি সবসময় জনগণের পাশে দাঁড়ায়। শেখ হাসিনা বলেন, বাহিনীর সদস্যরা পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার সাথে তাদের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি শুধু দেশেই জনগণের পাশে দাঁডায়ই না, অধিকন্তু বিদেশে শান্তিরক্ষা মিশনেও কাজ করে।
তিনি আরো বলেন, তাদের মানবিক সদিচ্ছার কারণে, তারা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে সম্মান পায়। আমি খুুব গর্ববোধ করি, যখন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা তাদের দেশে অবদান রাখার জন্য বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের প্রশংসা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকার প্রধান হিসেবে তিনি পিজিআরকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন। তাদের কাজ, দায়িত্ব ও নিষ্ঠা দেখে তিনি মুগ্ধ। তিনি আরো বলেন, তিনি জানেন যে রেজিমেন্টের সদস্যরা সর্বদা পেশাদারিত্ব, আনুগত্য, শৃঙ্খলা ও আন্তরিকতার সাথে তাদের দায়িত্ব পালন করে। তিনি আরো বলেন, ঝড়-বৃষ্টিসহ সকল প্রতিকূল আবহাওয়া মোকাবেলা করে দায়িত্ব পালনে আপনাদের আন্তরিকতা অত্যন্ত প্রশংসিত। এই সুনাম ধরে রাখতে আাপনারা সততা ও দেশপ্রেমের সাথে কাজ করবেন, এটাই আমার প্রত্যাশা।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার ঝুঁকিপূর্ণ রক্ষীদের ঝুঁকি বিবেচনা করে প্রথমে পিজিআর-এর জন্য ঝুঁকি ভাতা চালু করে।
তিনি বলেন, ইতিমধ্যেই সরকার গণভবন সংলগ্ন ব্যারাক তৈরি এবং গার্ডদের পরিবারের জন্য ১৪ তলা ভবন নির্মাণের মাধ্যমে আবাসন সমস্যার সমাধান করেছে।
সশস্ত্র বাহিনীর সার্বিক উন্নয়নে নিজ সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সব বাহিনীকে আন্তর্জাতিক মানের ব্যবস্থায় রূপান্তরিত করেছি। শেখ হাসিনা আরো বলেন, বাহিনীগুলোকে সক্ষম করা হয়েছে, যাতে করে তারা বৈশ্বিক বাহিনীগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে পারে, বিশেষ করে বিদেশে শান্তিরক্ষা মিশনে, যেখানে তারা অন্যান্য বিশ্ব বাহিনীর সঙ্গে কাজ করে।
তিনি বলেন, তাঁর সরকার সশস্ত্র বাহিনীকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতি-১৯৭৪-এর সাথে সঙ্গতি রেখে ফোর্সেস গোল-২০৩০ বাস্তবায়ন করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দেশকে এমনভাবে গড়ে তুলছি, যাতে কখনো অন্যের ওপর নির্ভর করে এগিয়ে যেতে না হয়। আগামী দিনেও দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে এই কামনা করি।
বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগের উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছে।
তিনি বলেন, উন্নয়ন ও অগ্রগতির স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের পর, উন্নয়ন সহযোগীরা এখন আর আগের বছরগুলোর মতো অনেক শর্ত দেয় না।
প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট দেশ হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ এবং পিজিআর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ খালেদ কামাল প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থলের চারপাশে হেঁটে সকল অফিসার এবং জুনিয়র কমিশনড অফিসারদের সাথে কুশল বিনিময় করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী পিজিআরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কেক কাটেন।
তিনি ভিভিআইপি দায়িত্ব পালনের সময় গুরুতর আহত ও নিহতদের পরিবারের সদস্য এবং পিজিআর সদস্যদের মধ্যে উপহার বিতরণ করেন। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারেক আহমেদ সিদ্দিক এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহউদ্দিন ইসলাম মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সংশ্লিষ্ট সচিব এবং ঊর্ধ্বতন বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
এ দিকে গতকাল জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে সিলেট-৩ আসনের সরকার দলীয় সংসদ হাবিবুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে সত্যিকার অর্থে মেধাপাচার রোধ করা দুরূহ ব্যাপার। তিনি বলেন, স্বল্পোন্নত বা উন্নয়নশীল সব দেশ থেকেই মেধাপাচার হয়ে থাকে। তারপরও সরকারের নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও নানাবিধ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে দেশের মেধাপাচার নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে রয়েছে। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী জানান, দেশে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিখাতের ব্যাপক উন্নয়নের ফলে এবং দ্রুতগতির ইন্টারনেট সংযোগের কারণে মেধাবীরা দেশেই এখন কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে। তিনি বলেন, সব সেক্টরে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা, নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ফলে বাংলাদেশের মেধাপাচার অনেকটাই রোধ হচ্ছে। স্ব-স্ব ক্ষেত্রে মেধাবীদের মূল্যায়নে সরকারের পদক্ষেপ প্রশংসার দাবি রাখে।
তিনি বলেন, সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ, মেধাবীদের বৃত্তি বা উপবৃত্তি প্রদান, সব নিয়োগ প্রক্রিয়ায় মেধার প্রাধান্য, নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করে মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষালাভের সুযোগ সৃষ্টি, রাষ্ট্রীয়ভাবে বিশিষ্ট ও মেধাবীদের বিভিন্ন পদক-পুরস্কার ও কর্মসংস্থানের মাধ্যমে বর্তমান সরকার থেকে মেধাবীদের সর্বোচ্চ মূল্যায়ন করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম-১১ আসনের সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে গবেষণা পরিচালনা করে বঙ্গোপসাগরে ৪৭৩টি প্রজাতির মাছ শনাক্ত করা হয়েছে। ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা বাংলাদেশের সাগর উপকূলে এ পর্যন্ত ১৫৪ প্রজাতির সিউইড শনাক্ত করেছে, যার ২৭টি বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণার মাধ্যমে ৬ প্রজাতির সিউইডের চাষ পদ্ধতি উদ্ভাবন করা হয়েছে।
কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য আফজাল হোসেনের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুশৃঙ্খল, নিরাপদ ও দায়িত্বশীল শ্রম অভিবাসন নিশ্চিত করতে সরকার নিরলসভাবে কাজ করছে। বর্তমানের বিশ্বে ১৭৬টি দেশে ১ কোটি ৪৯ লাখের বেশি কর্মী কর্মরত আছেন।