করোনা ভাইরাসের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে সারাদেশে ঘোষিত কঠোর লকডাউনের মধ্যেও রূপগঞ্জে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও গাজীপুর-চট্টগ্রাম এশিয়ান হাইওয়ে সড়কে বেপরোয়া গতিতে চলছে ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক।
অদক্ষ চালক, যেখানে সেখানে পার্কিং, বেপরোয়া গতির ইজিবাইক এখন বাঁধাহীনভাবে বীরদর্পে চলছে মহাসড়ক ও এশিয়ান হাইওয়ে সড়কে। পুলিশের হাতে সাময়িক কয়েকটি গাড়ি আটক হলেও টাকার বিনিময়ে মুক্ত হয়ে যায় নিমিষেই। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় মহাসড়কে নিষিদ্ধ সত্বেও দিন দিন ইজিবাইকের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
প্রশাসন তেমন তৎপর না থাকায় সরকারিভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণার পরও তার তোয়াক্কা না করেই অভ্যন্তরীণ সড়ক ছেড়ে মহাসড়ক ও এশিয়ান হাইওয়ে সড়কে ব্যাপক হারে চলছে এই ব্যাটারি চালিত অবৈধ যান। কখনও সোজা, কখনও উল্টো পথে। এতে বাড়ছে ঝুঁকি, বাড়ছে দূর্ঘটনা।
এছাড়া এই ইজিবাইকের ব্যাটারি চার্জ করতে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে। যার সিংহভাগই অবৈধ সংযোগের। বাড়তি এই বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগ। ফলে গরম আসতে না আসতে লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠে মানুষ।
তবে শুরুতে যাতায়াতের ক্ষেত্রে সুবিধা হওয়ায় এ যান জনপ্রিয় হয়ে উঠলেও পরে সংখ্যার দিক থেকে বেড়ে যাওয়াসহ নানা কারণে এখন তা সুবিধার পরিবর্তে জনজীবনে মহাভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানা গেছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, রূপগঞ্জ উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও এশিয়ান হাইওয়ে সড়কে অবাধে চলছে এই ইজিবাইক। প্রশাসনের নাকের ডগায় এই ইজিবাইক চললেও কোন তৎপরতা দেখা যায়নি। ব্যাটারি চালিত ইজিবাইকের বেপরোয়া গতি দেখে মনে হয় তারা প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
একটি অনুসন্ধানে জানা গেছে, সরকারী অনুমোদনের বাধ্যবাধকতা না থাকায় এবং রাজস্ব প্রদানের সঠিক নিয়ম না থাকায় একশ্রেনীর অসাধু অর্থলোভী ব্যবসায়ীরা নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ব্যাটারী চালিত ইজিবাইক তৈরী করে রাস্তায় নামিয়ে দিয়েছে।
আর এসব ইজিবাইকগুলো অভ্যন্তরীণ সড়ক ছেড়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও গাজীপুর-চট্টগ্রাম এশিয়ান হাইওয়ে সড়কে ব্যাপক হারে চলাচল করছে। স্বাভাবিক সময়ে এই ইজিবাইকগুলো উপজেলার তারাবো,বরাব, রূপসী, বরপা, ভূলতা, গোলাকান্দাইল, কাঞ্চনসহ প্রতিটি সড়কেই চলাচল করে এসব ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক।
এখন লকডাউনের মধ্যে এই ইজিবাইকগুলো গাউছিয়া হইতে ঢাকা, ঢাকা হইতে গাউছিয়া, আবার গাউছিয়া হইতে নরসিংদীও যাতায়াত করছে। হাইওয়ে পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশ কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় দিনকে দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে এই ব্যাটারী চালিত ইজিবাইকগুলো।
এছাড়া এই ব্যাটারি চালিত যানগুলোকে ঘিরে চলছে চাঁদাবাজির মহোৎসব। এক শ্রেনীর রাজনৈতিক দলের পরিচয়ধারী চাঁদাবাজচক্র ইজিবাইকগুলো থেকে প্রতিদিন মোটা অংকের টাকা চাঁদাবাজি করে ব্যাটারি চালিত যান নিয়ন্ত্রণ সংস্থাসহ সকলকে ম্যানেজ করায় ব্যাটারী চালিত ইজিবাইক চালকরা আরো বেশী সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে চলাচলরত কবির হোসেন নামে এক ট্রাক চালক জানায়, ভাই ব্যাটারী চালিত ইজিবাইক মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করায় আমাদের বড় গাড়ি চালাতে এই লকডাউনেও অনেক হিমশিম খেতে হয়। আর প্রতিনিয়ত সড়ক দূর্ঘটনার শিকার হলেও হাইওয়ে পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশেরা বাঁধা না দেয়ায় এগুলো চলাচল করছে আরও বেশি।
স্থানীয় এক হাসপাতালের এ্যাম্বুলেন্স চালক জানান, লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ করায় মহাসড়কে গাড়ির চাপ কম। এদিকে ব্যাটারি চালিত ইজিবাইকগুলো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এগুলো রাস্তার মাঝখান দিয়ে চলাচল করে আর হর্ন দিলেও সাইট দেয় না। মাঝে মাঝে রোগী নিয়ে বিপাকে পড়ে যাই।
কি বলব ভাই মহাসড়কে ইজিবাইকগুলো এতো দ্রুত গতিতে চলে। দেখে মনে হয় প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এতে যাত্রীরাও আঁতকে উঠে। সরকার এগুলোকে নিষিদ্ধ ঘোষণার পরও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মহাসড়কে। এটা খুবই দুঃখজনক।
আড়াইহাজার উপজেলার পাঁচরুখী এলাকা থেকে আসা ইজিবাইকযাত্রী আনোয়ার হোসেন নামে এক মাছ ব্যবসায়ী জানায়, লকডাউনে বাস বন্ধ থাকায় বাধ্য হয়ে এই ইজিবাইক দিয়ে যাতায়াত করি। পাঁচরুখী থেকে গোলাকান্দাইল আসতে বাসে মাত্র লাগে ১০টাকা আর ইজিবাইকগুলোতে ভাড়া নিচ্ছে ৩০ টাকা।
ইজিবাইক দিয়ে আসলে যেমন দেরি হয় তেমন ভয়ও করে। এই ইজিবাইকের বেশিরভাগ চালক অপ্রাপ্ত হওয়ায় বেপরোয়া গতিতে ইজিবাইক চালায়। মাছ বিক্রি করতে প্রতিদিনই আমার এই গোলাকান্দাইল আসতে হয়। যে কয় টাকা বিক্রি করি বেশির ভাগ ভাড়ায় চলে যায়। তবুও পেটের দায়ে আসি। এখানে আসলে পাঁচরুখী থেকে একটু বেশি দামে বিক্রি করা যায়।
আরেক ইজিবাইক যাত্রী ফারজানা জানায়, কঠোর লকডাউনেও ইজিবাইকের দাপট কমেনি। এগুলো এখন মহাসড়কেও চলাচল করছে। পুলিশ কিছুই বলছে না। এই অবৈধ ইজিবাইকের দাপটে এলাকার অভ্যন্তরীণ সড়কেও চলাচল দুষ্কর হয়ে পড়েছে। নিয়ন্ত্রণহীন এসব যানের কারণে প্রায় সময় দূর্ঘটনা ঘটছে। এসব যানের কারণে রাস্তায় চলাচলে আতঙ্কে থাকতে হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহাসড়কের চলাচলকারী ইজিবাইকের এক চালক জানান, আমি কাপড়ের ব্যবসা করি। লকডাউনে মার্কেট বন্ধ,কোন কাম-কাজও নাই। আবার সামনে ঈদ। তাই ভাড়া ইজিবাইক চালাচ্ছি। সারাদিন এই ইজিবাইকের জমা দিতে হয় ৩‘শ টাকা। এলাকায় তেমন টিপও পাই না। তাই এই মহাসড়কে উঠি।
জানি মহাসড়কে অনেক একসিডেন্ট হয়। তারপরও নিরুপায় হয়ে সংসার চালাতে গাড়ী চালাতে হচ্ছে। ইনকাম না করলে খাবো কি? রাস্তায় চাঁদা দিতে হয়, পুলিশে ধরলে অনেক টাকা দিয়ে গাড়ি ছাড়াতে হয়। আমরা গরীব হয়ে পাপ করেছি। আমরা যাবো কোথায়?
এ বিষয়ে হাইওয়ে পুলিশের এক সার্জেন্ট জানান, মহাসড়কে চলাচলরত নিষিদ্ধ অটোরিকশা, ইজিবাইক ও সিএনজিসহ যত পরিবহন আছে আমরা সেগুলো প্রতিদিন আটক করে নিয়মিত মামলা দিচ্ছি এবং যেগুলো মামলার যোগ্য নয় সেগুলো আটক করে ডাম্পিংয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। এগুলো দ্রুত বন্ধ করার আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।