মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ রূপগঞ্জের চনপাড়া পূর্ণবাসন কেন্দ্র এলাকায় দুই গ্রুপের গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ২৪ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ সৈয়দ মিয়া (৫৫) নামের এক দিনমজুর মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।
বুধবার (১০ মে) বেলা তিনটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। গুলিবিদ্ধ সৈয়দ মিয়া চনপাড়া পূর্ণবাসন কেন্দ্র এলাকার দুই নং ওয়ার্ডে আবুল হাসেমের ছেলে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চনপাড়া পূর্ণবাসন কেন্দ্র এলাকার মাদক ব্যবসা থেকে শুরু করে নানা অপরাধের নিয়ন্ত্রণ করতো ইউপি সদস্য বজলুর রহমান বজলু।
বজলু মারা যাওয়ার পর থেকেই চনপাড়া পূর্ণবাসন কেন্দ্র এলাকার আধিপত্য নিজেদের দখলে নিতে কায়েতপাড়া ইউপির সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান সেলিনা আক্তার রিতা গ্রুপ, জয়নাল গ্রুপ, ইয়াছমিন গ্রুপ, রায়হান গ্রুপ, শাওন গ্রুপ, রবিন গ্রুপ, শমসের গ্রুপ ও শাহাবুদ্দিন গ্রুপ উঠে পড়ে লেগেছে। আর চনপাড়ার মাদকসহ অপরাধ দখলকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকদিন ধরেই ওই সব গ্রুপ আলাদা ভাবে বিভিন্ন সময় সশস্ত্র মহড়া দিয়ে রাতভর দফায় দফায় সংর্ঘষ বাধিয়ে আসছে।
এসব বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে রূপগঞ্জ থানায় হত্যা, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, মাদকসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডের মামলা রয়েছে। শুধু জয়নালের বিরুদ্ধেই হত্যাসহ নানা অপরাধের অভিযোগে ২৮টি মামলা রয়েছে। এসব বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে এলাকার মানুষ ভয়ে মুখ খুলতে চায় না প্রতিবাদও করতে চায় না।
বুধবার দুপুর পৌনে তিনটার দিকে হঠাৎ করে জয়নাল গ্রুপের সঙ্গে শমসের ও শাহাবুদ্দিন গ্রুপের মাঝে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। উভয় গ্রুপের সন্ত্রাসীরা লাইফ জ্যাকেট, হেলমেট পড়ে, পিস্তল ও ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায়। হামলাকারীরা এক পক্ষ আরেক পক্ষকে ইট পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এ সময় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এলাকাবাসী ছোটাছুটি করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেন। নিরাপত্তার জন্য ঘরবাড়িতে তালা মেরে দেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
এ সময় উভয়ের গ্রুপের বেশ কয়েকজন এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষন শুরু করে। সংঘর্ষে এলাকাবাসী পথচারী সহ উভয় পক্ষের অন্তত ২৪ জন আহত হয়েছে বলে সংবাদ পাওয়া গেছে। এসময় গুলিবর্ষণকালে সৈয়দ মিয়া নামে এক দিনমজুর গুলিবিদ্ধ হয়। গুলিবিদ্ধ সৈয়দ মিয়াকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মুমূর্ষ অবস্থায় ভর্তি করা হয়। খবর পেয়ে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এএফ এম সায়েদের নেতৃত্বে বিপুল পরিমাণ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ঘটনাস্থল গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
গুলিবিদ্ধ সৈয়দের পরিবারের অভিযোগ, জয়নাল গ্রুপের রাব্বি নামের এক সন্ত্রাসী প্রকাশ্য দিবালোকে পিস্তল দিয়ে গুলি করে সৈয়দকে।
নাম না প্রকাশ করতে স্থানীয় বেশ কয়েকজন এলাকাবাসী বলেন, চনপাড়া পূর্ণবাসন কেন্দ্র এলাকায় বর্তমানে মাদক নিয়ন্ত্রণ করছে ইয়াসমিন ও তার মার রহিমুন। ইয়াসমিনকে সেল্টার দিচ্ছেন জয়নালসহ তার গ্রুপের সদস্যরা। আর ইয়াসমিনের মা রহিমুনকে সেল্টার দিচ্ছেন শমসের ও শাহাবুদ্দিন গ্রুপ।
শমসের ও শাহাবুদ্দিন গ্রুপকে সেল্টার দিচ্ছেন কায়েতপাড়া ইউপির সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান সেলিনা আক্তার রিতা। মাদক ব্যবসায়ী রায়হান ও শাওন গ্রুপকে সেল্টার দিচ্ছে শাওন গ্রুপ।
আর এসব গ্রুপের প্রধানরা তাদের বাহিনীর সদস্যদের হাতে নানা ধরনের অস্ত্র দিয়ে চনপাড়া পূর্ণবাসন কেন্দ্র এলাকাসহ আশপাশের এলাকায় ইয়াবা, ফেনসিডিল, মদ, বিয়ারসহ নানা নেশা জাতীয় দ্রব্য বিক্রি করাচ্ছে। ভয়ে স্থানীয় এলাকাবাসী প্রতিবাদ করার সাহসটুকু পায়না।
প্রতিবাদ করলেই হামলা মামলা হত্যাসহ নানা নির্যাতনের শিকার হতে হয়। আর মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়েইই কয়েকদিন পর পর অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এসব গ্রুপের সদস্যরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পরছে। এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে চনপাড়া পূর্ণবাসন কেন্দ্র এলাকার সাধারণ মানুষ।
এদিকে সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুরো চনপাড়া পূর্ণবাসন কেন্দ্র এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। আবারো সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। বিপুল পরিমাণ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা চনপাড়া পূর্ণবাসন কেন্দ্র এলাকায় অভিযান চালাচ্ছে।
এর আগে, গত (১২ এপ্রিল) সকাল ৮টার দিকে এসব গ্রুপের মাঝে গুলি বিনিময় ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তখন গুলিবিদ্ধ হয়, মো. সানি (১৭), পারভেজ (২১), মো. রুমান (১৮) এবং ইমন (২২)। এছাড়া সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন আহত হয়। পুলিশ একাধিকবার অভিযান পরিচালনা করে মাদক ও অস্ত্রসহ অন্তত ৩০ জনকে গ্রেপ্তার করে।
রূপগঞ্জ থানার ওসি/তদন্ত আতাউর রহমান বলেন, বিপুল সংখ্যক আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা চনপাড়া পূর্ণবাসন কেন্দ্র এলাকায় অভিযান চালাচ্ছে। অপরাধীদের কোন ছাড় দেওয়া হবে না। সৈয়দ মিয়া নামে এক দিনমজুর গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।