দ্রব্যমূল্য নিয়ে জনগণের কষ্ট লাঘবে উচ্চ মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আমরা স্বীকার করে নিচ্ছি মূল্যস্ফীতি ও লোডশেডিংয়ে মানুষ কষ্টে আছে। স্বীকার করে বসে থাকলে তো হবে না। নানা কৌশল দিয়ে এটি মোকাবিলা করতে হবে। আমাদের প্রথম উদ্দেশ্যই হবে মূল্যস্ফীতি যেন আর না বাড়ে সেটি নিশ্চিতে কাজ করা।
গতকাল রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় সরকার প্রধান এ নির্দেশনা দেন। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। সভা শেষে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসনগুলো তুলে ধরে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
সভার বরাত দিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মূল্যস্ফীতি মোকাবিলা করতেই হবে। প্রথম উদ্দেশ্য আর যেন এটা না বাড়ে। এনাফ, নো মোর। বাজারে স্টক বাড়াতে হবে। ইমপোর্ট অথবা ইন্টারনাল প্রোডাকশন বাড়াতে হবে। দেশব্যাপী বিভিন্ন পয়েন্টে নিত্যপণ্যের স্টক বাড়াতে হবে। সংবেদনশীল আইটেম যেগুলো রাতারাতি দাম বেড়ে যায় সেগুলোর স্টক বাড়াতে হবে। টিসিবিকে আরও জোরালোভাবে স্টক করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু ঢাকায় স্টক করলে হবে না- রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গায় সংবেদনশীল পণ্যের স্টক বাড়াতে হবে। বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে চাল, ডাল, আলু, তেল, পেঁয়াজ যা আছে সবকিছুর স্টক বাড়াতে হবে। এসব কৌশল দ্রুত নিতে হবে। মূল্যস্ফীতি কেন বাড়ছে গবেষণা করে এর কারণ খুঁজে বের করার নির্দেশও দিয়েছেন সরকারপ্রধান।
এদিকে একনেক সভায় ১৮টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। অনুমোদিত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ১১ হাজার ৩৮৭ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৭ হাজার ৪৪৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, বৈদেশিক ঋণ থেকে ৩ হাজার ৮৬১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ৮০ কোটি ৭৮ লাখ পাওয়া যাবে।
অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হলো
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘ফরিদপুর জেলাধীন মধুমতি নদীর বাম তীরের ভাঙন হতে শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ স্মৃতি যাদুঘর সংযোগ রাস্তাসহ অন্যান্য এলাকা সংরক্ষণ ও ড্রেজিং’ প্রকল্প; স্থানীয় সরকার বিভাগের ‘বাগেরহাট জেলার পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্প; কৃষি মন্ত্রণালয়ের ‘নতুন ৬টি আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপনের মাধ্যমে স্থানভিত্তিক ধানের জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং বিদ্যমান গবেষণাগার উন্নয়ন’ প্রকল্প; স্থানীয় সরকার বিভাগের ‘নেত্রকোণা জেলার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্প; প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ‘আশ্রয়ণ-২ (৫ম সংশোধন)’ প্রকল্প।
স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের ‘১০টি মেডিকেল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য আধুনিক সুবিধা সম্বলিত ১৯টি হোস্টেল ভবন নির্মাণ’ প্রকল্প; স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের ‘পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন, পটুয়াখালী (১ম সংশোধনী)’ প্রকল্প; মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন আর্টস ফ্যাকাল্টি বিল্ডিং স্থাপন’ ও ‘হায়ার এডুকেশন এক্সিলারেশন অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন (এইচইএটি)’ প্রকল্প; স্থানীয় সরকার বিভাগের ‘গুরুত্বপূর্ণ নগর অবকাঠামো উন্নয়ন (২য় পর্যায়) (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্প; নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের ‘বাংলাদেশ রিজিওনাল কানেক্টিভটি প্রজেক্ট-১: শেওলা, রামগড় ও ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দর উন্নয়ন এবং বেনাপোল স্থলবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার আধুনিকায়ন (২য় সংশোধিত)’ প্রকল্প।
এছাড়া গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ‘সাতক্ষীরা সড়ক ও সিটি বাইপাস সড়ককে সংযুক্ত করে সংযোগ সড়কসহ তিনটি লিংক রোড নির্মাণ (প্রস্তাবিত ১ম সংশোধিত)’ প্রকল্প; ‘সাভার সেনানিবাস এলাকায় মিট প্রসেসিং প্ল্যান্ট স্থাপন’ প্রকল্প; ‘ডিজিএফআই এর টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি অবকাঠামো, মানবসম্পদ এবং কারিগরি সক্ষমতা উন্নয়ন (টিআইএইচডিটিসিবি) (প্রস্তাবিত ২য় সংশোধিত)’ প্রকল্প; রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে ৩য় ও ৪র্থ ডুয়েল গেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন নির্মাণ (প্রস্তাবিত ২য় সংশোধনী)’ প্রকল্প, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের ‘লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প (২য় সংশোধিত) প্রকল্পের মেয়াদ ৪র্থ বার বৃদ্ধি’ প্রকল্প ‘চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোড’ প্রকল্প; ‘জাতীয় উন্নয়ন প্রশাসন একাডেমি প্রতিষ্ঠা’ প্রকল্প এবং ‘নড়াইল জেলার পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে।