রুদ্রবার্তা২৪.নেট: আমি দীর্ঘ বারো বছর অপেক্ষার শেষে আজ মা হতে পেরেছি। মাতৃত্বের স্বাদ পৃথিবীর সমস্ত কিছুর থেকে অনেক বেশী তৃপ্তির আর সুখের। আমার আনন্দ বুঝিয়ে বলার ভাষা নেই আমার কাছে। একটা বাচ্চার জন্য অনেক কিছু করেছি। বাচ্চা হয় না বলে কত জনে কত কিছু বলেছে। শুনতাম আর চোখের পানি ফেলতাম।
বহু ডাক্তার দেখিয়েছি। দোয়া করেছি। অবশেষে আল্লাহ আমার ডাক শুনছে। আমি মা হয়েছি। মা দিবসে মা হওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। এটা এক অন্য রকম পাওয়া। আজকে আমার জীবনের সবচেয়ে সুখের দিন। কথা গুলো বলছিলেন ভূমিষ্ঠ শিশু সন্তানের মা নার্গিস। শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তার ছেলে হয়েছে। মা দিবসে মাতৃত্বের ছোয়া পেয়ে আনন্দের শিখরে রয়েছেন এই নারী।
মা দিবসে মা হওয়ার অনুভূতি প্রতিটি নারীর জীবনে শ্রেষ্ঠ উপহার। এ বছরে মা দিবসে দীর্ঘ অপেক্ষার পর কিছু ভাগ্যবান মায়েরা পেয়েছেন জীবনের সেই শ্রেষ্ঠ উপহার। নগরীর একাধিক বেসরকারী হাসপাতালে ঘুরে এমনি কিছু মায়ের দেখা মিলে।
৮ এপ্রিল বিকালে নগরীর মেডিহোপ হাসপাতালে কথা হয় সদ্য নবজাতকের মা ফতুল্লার বাসিন্ধা রীতার সঙ্গে। তিনি বলেন, আজকে ভোরে আমার মেয়ে হয়েছে। গত ৯ মাসের কষ্ট আর আকাঙ্খার ফল আমার এই মেয়ে। ৯ বছর পরে এই মেয়ে হয়েছে। অন্তঃসত্ত¡া হওয়ার পর দীর্ঘ নয় মাসের পথচলাটা সহজ ছিল না।
সময়টা যেমন সুখের ছিল, তেমনি কষ্টেরও। অনেক চড়াই-উতরাই পার করতে হয়েছে। যখন-তখন অসুস্থ হয়ে পড়া, খাবারে নানা রকম বিধিনিষেধ। কারণ তখন আমার মধ্যে আরেকটি জীবন বেড়ে উঠছিল। মা হওয়ার আবেগ এই কষ্ট সহ্য করার ধৈর্য্য দিয়েছে। প্রসবের মতো মৃত্যু যন্ত্রণাও মেয়েকে দেখে ভুলে গেছি।
একই হাসপাতালের অন্য একজন নবজাতকের মা নিতাইগঞ্জের বাসিন্ধা বিথি রানীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান তার নারী থেকে মা হয়ে উঠার কথা। তিনি বলেন, দশ বছর অনেক ডাক্তার দেখিয়েছি। ইন্ডিয়ায় গিয়েও চিকিৎসা করেছি। দশ বছর পরে গত বছর আমার গর্ভে সন্তান আসে।
দশমাস খুব ভয়ে ছিলাম। নানান রকম ভাবনা চিন্তায় জর্জরিত হয়ে পড়তাম। আমার বাবুটা ঠিকমতো বেড়ে উঠছে তো? কত সপ্তাহে ওর আকার আসবে, কত সপ্তাহে কতটুকু বাড়ছে, এমন হাজারো চিন্তা থাকত দিনরাত।
তিনি আরো বলেন, যেদিন আলট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে প্রথম সন্তানের আকার দেখলাম, সেদিনই যেন মা হয়ে উঠলাম। ভালোবাসা আরও বেড়ে গেল। প্রথম যখন ওর নড়াচড়া অনুভব করলাম, মনে হলো এ যেন এক নতুন আমি। পুরোই বদলে যেতে লাগল আমার পৃথিবী। সব সময় কথা বলতাম অনাগত সন্তানের সঙ্গে।
মাঝেমধ্যে সে নড়াচড়া করে মায়ের কথায় সাড়া দিত। হঠাৎ করে পেটের মধ্যে লাথি মারত, ধাক্কা দিত। কখনো ভাবতে পারিনি মা হওয়া এতটা সুখের। শেষ পর্যন্ত আমি মা হলাম। আজকে সকালে আমার ছেলে বাবু হয়েছে।
আমার মায়ের সাথে আমার সম্পর্কটা অতি মধুর। আমার ছেলের সাথেও একই সম্পর্ক হবে আমার। আমি জানতাম না আজকে মা দিবস। তবে সকালে ছেলের বাবা বলল আজকে মা দিবস। এতো বছর পরে এই দিনে মা হতে পারা স্মরনীয় হয়ে থাকবে আজীবন।
বিথী রানীর এই কথাগুলো যেন প্রকাশ করে একটি জীবনের রক্ত মাংস থেকে অন্য আরেকটি জীবন্ত শরীর সৃষ্টির আনন্দ, আরেকটি জীবনকে পৃথিবীর আলো হাওয়ায় সুন্দর ভাবে বেড়ে উঠতে সাহায্য করা এক প্রকারের সৃষ্টিশীলতাই তো ! যা কেবল পৃথিবীতে একমাত্র মায়ের পক্ষেই সম্ভব।