সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:১৮ পূর্বাহ্ন

ভাই হত্যায় জাকির খানের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলেন তৈমুর

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩, ৩.৪৬ এএম
  • ১০৬ বার পড়া হয়েছে

নারায়ণগঞ্জ পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী ও ব্যবসায়ী নেতা সাব্বির আলম খন্দকার হত্যা মামলার আসামি জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খানকে আদালতে হাজির করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রæয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় একটি প্রিজন ভ্যানে করে তাকে আদালতে আনা হয়।
প্রিজন ভ্যান থেকে নামানোর সময় জাকির খানকে দেখা যায় হাসিমুখে হাত উপরে তুলে নেতাকর্মীদের হাত নাড়াতে। তাকে ডান্ডাবেড়ি ও হাতপড়া পড়ানো ছিল। হেলমেটের ভেতরে ছিল চশমা।
পরে নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা-২ আদালতের বিচারক শাম্মী আক্তারের আদালতে নিজ দলের ব্যবসায়ী সাব্বির আলম খন্দকারকে হত্যা মামলায় তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য হাজির করা হয়। জাকির খান ছাড়াও এ মামলার আরও দুই আসামি নাজির হোসেন ও মোক্তার হোসেন আদালতে হাজির ছিলেন।
এ সময় সাক্ষ্য প্রদান করেন এ মামলার বাদি নিহত সাব্বির আলম খন্দকারের বড় ভাই বিএনপির চেয়ারপার্সনের সাবেক উপদেষ্টা, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক আহŸায়ক অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। সাক্ষী গ্রহণ শেষে আদালত আগামী ৬ মার্চ পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য্য করেছেন।
মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুর রহিম বলেন, ব্যবসায়ী নেতা সাব্বির আলম খন্দকার হত্যা মামলায় আসামী জাকির খানের বিরুদ্ধে তার বড় ভাই অ্যাডভোকেট তৈমূর সাক্ষী প্রদান করেছেন। মামলার আরও ২৭/২৮ জন সাক্ষী রয়েছেন।
পর্যায়ক্রমে তাদের সাক্ষ্যগ্রহণ চলবে। সাব্বির হত্যার বিচার আগেই শুরু হয়েছিল। আজ তৈমূর সাহেব বাদী হয়ে এসেছেন। তিনি সাক্ষী দিয়েছেন এবং আসামি পক্ষ তাকে জেরা করেছেন। আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। আগামী ৬ মার্চ আবারও সাক্ষ্যগ্রহণ হবে।
সাক্ষ্য গ্রহন শেষে আসামী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রবিউল হোসেন বলেন, আজ জাকির খানের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ করার কথা ছিল। সেই সাথে সাব্বির আলম খন্দকারের বড় ভাই অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার আদালতে সাক্ষী দিয়েছেন।
এটি ২০০৩ সালের একটি হত্যা মামলা। দীর্ঘদিন পর আজ প্রথম মামলার বাদী সাক্ষী দিতে এসেছেন। আমরা জাকির খানের পক্ষে জেরা করেছি। আজ জেরা শেষ হয়নি। আরও একদিনের জন্য আদালত সময় মঞ্জুর করেছেন। সেদিন সেই সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হবে।
সাক্ষ্য প্রদান শেষে তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, জাকির খান কী কী অপকর্ম করেছে তা তুলে ধরেছি আমরা। নারায়ণগঞ্জের ৩২টি সংগঠনের মিটিংয়ে অপারেশন ক্লিন হার্টের সময় জিজ্ঞেস করা হয়েছিল আপনারা কে আছেন যে সন্ত্রাস করে না, তার পরিবারেও কেউ সন্ত্রাস করে না। তখন সাব্বির বলেছিল আমি সন্ত্রাস করি না, আমার পরিবারেও কেউ সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত নন।
তখন আর্মি অফিসাররা তাকে বলেছিল, তাহলে আপনি বলেন। এরপর সাব্বির বলেছিল, আমার জানাজায় শরীক হওয়ার আহŸান জানিয়ে আমি আমার বক্তব্য শুরু করলাম। তখন এই জাকির খানরা কীভাবে সন্ত্রাস করে নাম উল্লেখ করে এগুলোর ব্যাখ্যা করেছিল সে (সাব্বির)। তারপরেই তারা সাব্বিরকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
এদিকে জাকির খানকে নারায়ণগঞ্জ আদালতে আনাকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই তার অনুসারীরা উপস্থিত হন। এক পর্যায়ে তারা জাকির খানের মুক্তি চেয়ে ¯েøাগান দেয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের থামিয়ে দেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আগে থেকেই অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
কোর্ট পুলিশের পরিদর্শনক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, পরিস্থিত স্বাভাবিক ছিল। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আমাদের নিয়মিত ডিউটি হচ্ছে কোনো হাজতি আদালতে আনা হলে পরিস্থিতি যেন স্বাভাবিক থাকে সেদিকটা খেয়াল রাখা। সে অনুযায়ী আমরা প্রস্তুত ছিলাম।
জাকির খানকে আদালতে আনা হবে বলে সকাল থেকেই আদালতপাড়ায় বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আদালতে মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সদস্যদের। একদিন আগেই সাক্ষ্যগ্রহণে উপস্থিত করার জন্য কাশিমপুর কাগার থেকে নারায়ণগঞ্জ কারাগারে এনে রাখা হয় জাকির খানকে।
উল্লেখ্য, সাব্বির আলম খন্দকার ছিলেন দেশের গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার অ্যান্ড ম্যানুফেকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) প্রতিষ্ঠাপরিচালক ও সাবেক সহ-সভাপতি। তিনি বিএনপি নেতা তৈমুর আলম খন্দকারের ছোট ভাই।
আগামী ১৮ ফেব্রæয়ারি সাব্বির আলম খন্দকার হত্যা মামলার ২০তম বার্ষিকী। সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলায় ২০০৩ সালের ১৮ ফেব্রæয়ারি শহরের মাসদাইর এলাকায় নিজ বাড়ির অদূরে আততায়ীদের গুলিতে নিহত হন সাব্বির।
হত্যাকান্ডের পর তার বড় ভাই তৈমুর আলম বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা) আসনের তৎকালীন বিএনপি দলীয় এমপি গিয়াসউদ্দিনকে প্রধান আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। দীর্ঘ প্রায় ৩৪ মাস তদন্ত শেষে সিআইডি ২০০৬ সালের ৮ জানুয়ারি আদালতে ৮ জনকে আসামি করে চার্জশিট দাখিল করেন।
এ চার্জশিটে মামলার প্রধান আসামি গিয়াস উদ্দিনকে মামলা থেকে বাদ দেওয়ায় মামলার বাদী তৈমুর আলম খন্দকার সিআইডির দেওয়া চার্জশিটের বিরুদ্ধে ওই বছরের ২৪ জানুয়ারি আদালতে নারাজি পিটিশন দাখিল করেন।
নারাজি পিটিশনে তৈমুর আলম বলেছিলেন, গিয়াসউদ্দিনই সাব্বির আলম হত্যাকাণ্ডের মূল নায়ক। গিয়াসউদ্দিন ও তার সহযোগীদের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা একটি গোঁজামিলের চার্জশিট দাখিল করেছেন। পরবর্তীতে আদালত মামলাটি পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দেন।
এর পর থেকে ৬ বছর ধরে নারায়ণগঞ্জ বিচারিক হাকিম আদালতে (ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট) মামলার শুনানি চলে আসছিল। গত ২০১১ সালের অক্টোবর মাসে তৈমুর আলম খন্দকার আদালতে দাখিলকৃত না রাজি পিটিশনটি আবেদন করে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
নারাজি পিটিশন প্রত্যাহারের কারণে গিয়াসউদ্দিন এখন আর মামলায় অভিযুক্ত নেই। ফলে সিআইডি ২০০৬ সালের ৮ জানুয়ারি আদালতে যে ৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছেন তার উপর ভিত্তি করেই মামলাটি পরিচালিত হচ্ছে।
এরপর থেকে জাকির খান দীর্ঘদিন ধরে পলাতক ছিলেন। পরিচয় গোপন করে গত এক বছর সপরিবারে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বসবাস করছিলেন। পরে গত ৩ সেপ্টেম্বর ভোরে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2021 rudrabarta24.net
Theme Developed BY ThemesBazar.Com

sakarya bayan escort escort adapazarı Eskişehir escort