নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির পথযাত্রা কর্মসূচির ব্যানারে দাঁড়ানোকে কেন্দ্র করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সামনেই দুই গ্রুপের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ্ সময় দুই গ্রুপের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার (২৩ মে) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচী শুরুর পূর্বে আড়াইহাজারের বিএনপি নেতা সুমন ও জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনির মধ্যে মহানগর বিএনপি নেতাকর্মীদের বাগবিতণ্ডা এবং ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে হাতাহাতি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এসময়ে প্রধান অতিথি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনিসহ তার নেতাকর্মীদের মাইক হাতে নিয়ে বার বার থামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে এক পর্যায়ে রনিকে ধমক দেন রিজভী। রিজভীর ধমক খেয়েও চুপ হয়ে যায় রনি।
এদিকে মহানগর বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচী শেষে সন্ধ্যায় মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা মিশনপাড়া এলাকায় অবস্থান করেছিলেন। এসময়ে হঠাৎ জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি’র নেতৃত্বে ৩০/৪০ জন লোকজন নিয়ে জেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রফিকের উপর অতর্কিত হামলায়। পরে রফিকও পাল্টা ধাওয়া করলে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে রনি পালিয়ে যান।
জানাগেছে, কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসাবে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির পদযাত্রায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
মহানগর বিএনপির কর্মসূচিতে দাওয়াত না পেয়েও রিজভীর আসার খবর শুনে মহানগর বিএনপির অনুষ্ঠানে আসেন বিএনপি নেতা বদরুজ্জামান খসরুর পুত্র সুমন। আর সাথে নিয়ে আসেন জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি তার অনুসারীদেরকে ।
রিজভী আসা মাত্র সুমন এসে মহানগর বিএনপির ব্যানারের সামনে এসে দাড়িয়ে পড়ে। এসময়ে মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন আনু তাকে ব্যানার সামনে থেকে সরে যেতে বলেন। এসময়ে মশিউর রহমান এসে আনোয়ার হোসেন আনুর সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়ে।
আনু বলেন সে তো আমার আমাদের মহানগর বিএনপি কেউ না তাহলে সে কোনো ব্যানারের সামনে দাঁড়াবে আর অনুষ্ঠান হলে মহানগর বিএনপির জেলা তো না । সে কেনো আসবে এবং ব্যানারে সামনে দাঁড়াবে। তবে সুমনের জন্য মানতে নারাজ রনি।
প্রত্যক্ষদর্শী ও দলের নেতাকর্মী সূত্রে জানা গেছে, কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিকালে শহরের খানপুর এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। নেতাকর্মীদের বক্তব্য শুরু হলে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের পদপ্রত্যাশী নেতা মাজহারুল ইসলাম জোসেফ সমাবেশস্থলে মিছিল নিয়ে আসেন। মিছিল নিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে তাকে থামাতে যান মহানগর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহেদ আহমেদ।
এ নিয়ে দুই পক্ষের অনুসারীদের মধ্যে হাতাহাতি ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে তারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় অন্য নেতারা এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন।
পরে প্রধান অতিথি ও দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী কর্মসূচিতে উপস্থিত হলে তার পাশে দাঁড়ানো নিয়ে আড়াইহাজার থানা বিএনপি নেতা মাহবুবুর রহমান সুমনের লোকজনদের মধ্যে বাগবিতণ্ডার ঘটনা ঘটে মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে।
এই ঘটনায় সুমনের পক্ষ নিয়ে জেলা যুবদলের সদস্যসচিব মশিউর রহমান রনির লোকজন আজাদের লোকজনের ওপর চড়াও হলে সংঘর্ষ শুরু হয়।
এরপর মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা তাতে প্রতিবাদ করলে মশিউর রনির সাথে কথা কাটাকাটি ও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে রিজভীর নির্দেশে বিএনপি নেতা আজাদ গিয়ে মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীদের বুঝিয়ে সুমনকে ব্যানারে দাঁড়াতে দিতে বলে।
মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা বিএনপি আজাদের কথায় সুমনকে ব্যানারে দাঁড়াতে দেয়। এরপরও সুমনের জন্য রনি মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে তর্ক করতেই থাকেন।
এসময়ে জেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ রফিকুল ইসলাম রফিকের সাথেও মশিউর রনির বাগবিতণ্ডা ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে রিজভী ও বিএনপি’র নেতাকর্মীদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত করে রিজভী বক্তব্যে রাখেন।
বিশৃঙ্খলা প্রসঙ্গ টেনে এ সময় বক্তব্যের এক অংশে প্রধান অতিথি ও দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সবাই শান্তিপূর্ণভাবে দাঁড়াবেন। আপনারা কেউ ঝগড়াঝাঁটি করবেন না। আমি অনেককে দেখেছি, চিনেছি। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এবিষয়ে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেন, একটি পক্ষ আমাদের কর্মসূচিকে বানচাল করতেই এসব ঘটনা ঘটাইতে চেয়েছিল। কিন্তু আমরা তা হতে দেয়নি। মূলত ব্যানারে দাঁড়ানোকে কেন্দ্র করেই এ পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল।
পদযাত্রা শেষে যুবদলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি পরবর্তীতে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।