‘সরকার তেলের দাম বাড়াইছে, বাস ওয়ালারা গাড়ি ভাড়া বাড়াইছে। হেগো (তাদের) তো কোন সমস্যা নাই। সমস্যা তো আমাগো মতো গরীব মানুষের। আমাগো ইনকাম তো আগের মতোই আছে, বাড়ে নাই। আমরা না খাইয়া মরলে কার কি আহে যায়।’
হঠাৎ করে জ্বালানি তেলে মূল্যবৃদ্ধির পর ডিজেল চালিত বাস ও মিনিবাসের ভাড়া বেড়ে যাওয়ায়, ক্ষোভ প্রকাশ করে কথা গুলো বলছিলেন ফাতেমা বেগম। রবিবার নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে সরেজমিন সাধারণ মানুষের এমন ক্ষোভের প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
এদিকে, জ্বালানি তেলে মূল্যবৃদ্ধির পর ডিজেল চালিত বাস ও মিনিবাসের সর্বোচ্চ ভাড়া পুনঃনির্ধারণ করে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের উপসচিব মো. মনিরুল আলম সাক্ষরিত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। সড়ক পরিবহন আইন- ২০১৮ এর ৩৪ (২) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ওই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
ভাড়া বৃদ্ধি করায় বিপাকে পড়েছে মধ্য আয়ের মানুষ। তাদের নিত্য দিনের যাতায়তে গুনতে হচ্ছে বাড়তি খরচ। হুট করে ২০টাকা ভাড়া বৃদ্ধি যেনো ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সামিতুল হাসান লাইভ নারায়ণগঞ্জকে জানান, বিশ্ব বাজারে তেলের মূল্য কমলেও বাংলাদেশে সেটি উল্টো। এটা আসলে দেশের জন্য এক ধরণের হুমকি সরূপ। লোক দেখানো উন্নয়ণের ঋণ আমাদের জনগণের কাঁধের উপরেই আসবে। তেলের দাম বৃদ্ধির প্রভাব আমাদের দেশে সকল সেক্টরে পড়বে। খাদ্য দ্রব্যসহ সকল কিছুর দাম বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু অপর দিকে আমাদের সেই অনুযায়ী আমাদের আয় নেই। ভাড়া বৃদ্ধি নিতান্তই আমাদের জন্য অসহ্যনীয় ভোগান্তি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা বাস, মিনি বাস, দুরপাল্লা পরিবহন মালিক সমিতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় ছেড়ে যাওয়া বাস গুলোর যাত্রীদের থেকে প্রতি টিকেটে ২০ টাকা বেশি নেওয়া হয়েছে। যেখানে, শনিবার এই সড়কে বাস ভাড়া ছিলো ৪৫ টাকা, এখন সেই ভাড়া ৬৫ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে।
অন্যদিকে, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার রুটে চলাচলকারী বাস ও মিনিবাসের ক্ষেত্রে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের প্রতি কিলোমিটারে যাত্রীপ্রতি সর্বোচ্চ ভাড়া ১ টাকা ৮০ পয়সার জায়গায় ২ টাকা ২০ পয়সা, ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে চলাচলকারী বাসের ক্ষেত্রে প্রতি কিলোমিটার যাত্রীপ্রতি ভাড়া ২ টাকা ১৫ পয়সার স্থলে ২ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ঢাকা-নারায়ণগঞ সড়কে বন্ধন, উৎসব পরিবহনে ভাড়া ৪৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬৫ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। বিআরটিসি দোতলা বাসে ৪০ টাকার ভাড়া ৫০টাকা নেওয়া হচ্ছে। তবে, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-পোস্তগোলা সড়কের চলাচলরত আনন্দ পরিবহনের ভাড়া আগের মুল্যেই আছে। এছাড়া জেলার অভ্যন্তরীন বাস, বন্ধু পরিবহন, বাঁধন পরিবহন আগের ভাড়াই চলাচল করছে।
ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মন্ময় সাকিব বাস ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে মন্তব্য করে বলেন, সম্প্রতি তেলের দাম বৃদ্ধি এবং বাস ভাড়া বৃদ্ধির ফলে সবচেয়ে বেশী সংকটে পড়বে নিন্মবর্গের মানুষ। কৃষিতে লোকসান আরও বেড়ে যাবে, ফলে কৃষকের অবস্থা আরও শোচনীয় হবে৷ শহুরে শ্রমিকদের জীবনযাত্রার মান তলানিতে গিয়ে ঠেকবে। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে গিয়ে “অচল অর্থনীতির” সূচনা হওয়ার সম্ভাবনা ও রয়েছে।
এ ব্যাপারে কথা হয় নারায়ণগঞ্জ জেলা বাস, মিনি বাস, দুরপাল্লা পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি দিদারুল ইসলামের সাথে। তিনি জানান, বিগত সময়ে আমাদের ভাড়া বৃদ্ধি হয়েছিলো ১৫টাকা। এবার জ্বালানী তেলের দাম বাড়ায় আমরা এবার ভাড়া বাড়িয়েছি আপাতত ২০টাকা। কেননা এবার আমাদের রাস্তা কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। সাইনবোর্ডের পরে কিন্তু আমাদের একটা প্রায় ৩ কিলোমিটারের ইউটার্ন আছে। এটা না থাকলে আরও ভাড়া কমে আসতো। পাবলিক তাদের মতামত প্রকাশ করবে স্বাভাবিক কিন্তু আমাদেরও তো কিছু করার থাকে না। কারণ তেলের দাম বাড়লে গাড়ির যত যন্ত্রপাতি আছে প্রতিটা জিনিসের দাম বাড়ে। এছাড়া মিস্ত্রি, ওয়ার্কার, শ্রমিকের মজুরিও বেড়ে যায়।
তিনি আরও জানান, আমরাও চাই না, জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাক। আমরাও চাই জ্বালানি তেলের দাম কমুক। সাধারণ মানুষের কাতারে থাকলে আমিও চাইতাম তেলের দাম কমে যাক। জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে সব কিছুর দাম বেড়ে যায়। এই অবস্থায় আমাদের বেচেঁ থাকা বড় দ্বায় হয়ে দাড়িয়েছে। করোনা থেকে এখন পর্যন্ত অনেক মালিক দেউলিয়া হয়ে গেছে। তারা এখন ‘দিন আনে দিন খায়’। আমি সাধারণ যাত্রীদের উদ্যেশে বলতে চাই। আমরা আসলে ভাড়া বৃদ্ধি করি না। আমাদের নিয়মের মধ্যে ভারা রেখেছি।