বিপুল পরিমাণ মাদকসহ আটক করা হয়েছে ঢাকাই চলচ্চিত্রের আলোচিত অভিনেত্রী পরীমনিকে। গতকাল বনানীর বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন। ‘সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগের’ ভিত্তিতে তার বাসায় অভিযান চালানো হয় বলে জানিয়েছেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক খন্দকার আল মঈন। আটকের পর র্যাবের তরফে বলা হয়, পরীমনির বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধার করা হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পরীমনির বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি। তাকে আটক করে র্যাব সদর দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়।
গতকাল বিকাল ৪টার দিকে বনানীর লেকভিউ ১৯/এ নম্বর রোডের ১২ নম্বর বাড়িতে অভিযান শুরু করে র্যাব সদর দপ্তর ও র্যাব ১-এর যৌথ দল। অভিযানের বিষয়টি টের পেয়ে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লাইভে আসেন পরীমনি। তিনি অভিযোগ করেন তার বাসার বাইরে কে বা কারা ভাঙচুর চালাচ্ছে।
তারা ভেতরে প্রবেশ করতে চাইছে। ডাকাতও হতে পারে এমন সন্দেহ করে পরীমনি বিভিন্ন জায়গায় সাহায্য চান। লাইভ চলাকালেই তিনি কয়েক জায়গায় টেলিফোনে কথা বলেন। প্রথমে বাধা দেয়া হলেও র্যাব সদস্যরা এক পর্যায়ে বাসার প্রধান ফটক পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেন। তখনো পরীমনি লাইভে ছিলেন। এক পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয় পেয়ে পরীমনি দরজা খুলে দেন। র্যাব সদস্য বাসায় প্রবেশ করে সেখানে থাকা সবার ফোন সিজ করেন। পরে পরীমনিকে লাইভ বন্ধ করতে বলেন। এক পর্যায়ে লাইভ বন্ধ হয়ে যায়। এরপরই শুরু হয় অভিযান। সন্ধ্যা ৭টার পর পরীমনিকে বাসার নিচে নামিয়ে আনা হয়।
অভিযান শুরুর পর পরীমনি লাইভে বলেন, আমি মরবো আর কেউ কিছু বলবে না? মরতে তো একদিন হবেই। আমি এই লাইভ কাটবো না। যতক্ষণ না থানা থেকে পুলিশ আসবে, মিডিয়া আসবে ততক্ষণ লাইভ চলবে। ভাই আপনারা কেউ বুঝতে পারছেন আমার অবস্থা? এইখানে কাছেই থানা। অথচ তারা আসছে না। আমার তো তাদের হেল্প লাগবে। তিনদিন ধরে আমি বিছানা থেকে উঠতে পারছি না। আমার পরিচিতরা কই। একটু আসবেন, দেখবেন? এরা কারা? ভাঙচুর করছে। এসব আল্লাহ সহ্য করবে না। আপনারা কত মানুষ এই লাইভ দেখছেন। কেউ কিছু বলছেন না। আমার বাসায় আমার বুড়ো নানা এসেছেন। আপনারা মিডিয়ার কেউ আসবেন? আমি তো মরে যাচ্ছি। ৩১ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডের লাইভ করেন তিনি।
মিডিয়া পাড়ায় আলোচিত-সমালোচিত নাম পরীমনি। টাইম লাইনে আসেন ‘আমার প্রেম আমার প্রিয়া’ সিনেমার মাধ্যমে। ২০১৯ সালের সিজেএফবি পারফরম্যান্স অ্যাওয়ার্ডে সেরা অভিনেত্রীর (সমালোচক) পুরস্কার পান তিনি। সাংবাদিক তামিম হাসানের সঙ্গে বাগদান হয় ২০১৯ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি। সেটি ভেঙে যায় এরপর ২০২০ সালের ৯ই মার্চ পরিচালক কামরুজ্জামান রনিকে বিয়ে করেন। ওই বছরেই বিচ্ছেদ হয় তাদের।
দেশের একমাত্র তারকা হিসেবে ফোর্বস ‘এশিয়ার ১০০ ডিজিটাল তারকা’র তালিকায় স্থান করে নেন পরীমনি। ২০২০ সালের এই তালিকায় নাম ছিল অমিতাভ বচ্চন, অক্ষয় কুমার, শাহরুখ খান, আলিয়া ভাটসহ বেশ কয়েকজন বলিউড তারকার। প্রখ্যাত আমেরিকান বিজনেস ম্যাগাজিন পরীমনিকে নিয়ে ফিচার করে। তার ফেসবুকে প্রায় ১ কোটি ফলোয়ার রয়েছে। আসল নাম শামসুন্নাহার স্মৃতি। অভিনয়ে আসার পর থেকেই আলোচনা-সমালোচনার মাঝেই ছিলেন তিনি।
চলতি বছরের ১৩ই জুন ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ করে আলোচনায় আসেন পরীমনি। ব্যবসায়ী নাসির ইউ মাহমুদের বিরুদ্ধে তিনি এই অভিযোগ এনে মামলা করেন। এর আগে নিজের ফেসবুকে প্রথম এই অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রীর সাহায্য কামনা করেন তিনি। এই অভিযোগ আমলে নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে নাসির ইউ মাহমুদ ও তার সহযোগীদের গ্রেপ্তার করে। মামলা দায়েরের পর পরীমনির বিষয়ে নানা তথ্য আসতে থাকে। ঢাকা বোট ক্লাবে তাকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ করা হলেও ভিডিও স্থির চিত্রে সেদিনের ঘটনার ভিন্ন দিক ধরা পড়ে। ওদিকে কিছুদিন জেল খাটার পর ব্যবসায়ী নাসির ইউ মাহমুদ এখন জামিনে আছেন। পরীমনির অভিযোগের বিষয়টি তখন ছিল টক অব দ্য কান্ট্রি। জাতীয় সংসদেও এ নিয়ে আলোচনা হয়। মামলার তদন্তের বিষয়ে পরীমনিকে বেশ কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারীরা। পরীমনির অভিযোগ তদন্তের মধ্যেই তথ্য আসে রাজধানীর গুলশানের একটি ক্লাবে ভাঙচুর চালিয়েছেন পরীমনি। গত ৮ই জুন রাতে গুলশান-১ এর ১৩৭ নম্বর সড়কের অল কমিউনিটি ক্লাব লিমিটেডে (এসিসিএল) এই ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, গত ৮ই জুন রাতে বোট ক্লাবে যাওয়ার আগে অল কমিউনিটি ক্লাব লিমিটেডে (এসিসিএল) যান এই অভিনেত্রী। সেখানে দায়িত্বরতদের সঙ্গে ঝামেলা করে ভাঙচুর চালান তিনি ও তার সঙ্গীরা। পরে নিজেই পুলিশ ডাকেন।
পরীমনি আটকের তিনদিন আগে পুলিশি অভিযানে দুই মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ও মরিয়ম আক্তার মৌকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই দুজনের বিরুদ্ধে নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। ওই দুই মডেলের বাসা থেকেও মাদক উদ্ধারের তথ্য জানায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পিয়াসা ও মৌকে মাদকের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।