নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মঞ্জুরুল হাফিজ বলেছেন, আমার জেলায় সবচেয়ে বেশি অবৈধ সংযোগ। তাই একটু মন খারাপ হয়েছে, লজ্জা পেয়েছি। একজন জেলা প্রশাসক হিসেবে গত ছয় মাসে আমাকে সবচেয়ে বেশি অপারেশন করতে হয়েছে এখানে।
মঙ্গলবার ( ২ জুলাই) দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটডের সিসি কামেরার সাহায্যে মনিটরিং কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ভালো লাগছে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে, অপনারা একটা লাইভ দেখতে পাচ্ছেন। এই মুহূর্তে একটা সিসি ক্যামেরা রানিং আছে। এবং এই সিসি ক্যামেরা দিয়ে শুধুমাত্র এই এলাকার গ্যাসের লাইনকে পাহারা দেয়া না। এই এলাকায় যত ঘটনা ঘটুক না কেন, এই ক্যামেরায় কিন্তু আসবে। একই সাথে পুরো নারায়ণগঞ্জে মাত্র ১৫ টা ক্যামেরা না, হয়তো আমরা অনেক বেশি জায়গা কাভারেজের আওতায় নিয়ে আসব। এটা বিভিন্নভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা বাহিনী থেকে শুরু করে ট্রাফিক ব্যবস্থা ও গ্যাসের লাইন দেয়াসহ প্রত্যেকটা কাজেই কিন্তু সাহায্য করবে।
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা মিটিংএ বসেন। বসে আপনাদের দায়িত্বটা জাস্ট একবার একটু পড়বেন । দেখবে যে তিতাস গ্যাসের চেয়ে আপনাদের দায়িত্বটা কোন অংশে কম নেই, এই জিনিসগুলো রক্ষা করা। যেহেতু আপনারা সরকারি কর্মচারী এবং সরকারি বেতন নেন। তাই আপনাদের দায়িত্ব সরকারি সম্পদ রক্ষা করা। পুরো নারায়ণগঞ্জে অবৈধ লাইন আছে, এটা আমাদের জন্য যেমন লজ্জার তেমনি আপনি জনপ্রতিনিধি হিসেবে আপনারও লজ্জার।
তিনি বলেন, চেয়ারম্যান সাহেবদের এত অভিযোগ আপনাদের মাঝে, কিন্তু আমি আমি সাড়ে ছয় মাস এখানে আছি, কই কেউ তো আমাকে বললেন না। যে আমার এলাকায় এ সমস্যাটা একটু দেখেন। জেলা প্রশাসকের কাজই হলো পুরা জেলায় যেকোনো সমস্যা আমরা সরকারকে সরাসরি জানাতে পারি। শুধু দোষারোপ করা আর এরকম একটা অনুষ্ঠানে এসে আমি অনুরোধ করবো কথা বলবেন, গা গরম সবারই হয়, সবাই উত্তেজিত হতে পারি কিন্তু আপনাকে বুঝতে হবে কখন থামতে হবে। সব সময় চিৎকার করে কথা বলে একজন উপদেষ্টা সামনে। এটাতে নারায়ণগঞ্জের অবস্থানকে আপনি কোথায় নিয়ে গেলেন। এই বিষয়টা আসলে খেয়াল রাখবেন। অনেক ঝগড়া আপনাদের যেখানে করার কথা সেখানে না করে আমাদের সামনে এসে করেন। যেন আমরা ভালো দর্শক বসে দেখব। এই কাজটি দয়াকরে এখানে করবেন না।
তিনি আরও বলেন, বিকেএমইএ’র একজন নেতা ও পরিচালক আমাদের শ্রদ্ধেয় মোহাম্মদ হাতেম সাহেব। এটা আপনাদেরও লজ্জার। আমি আপনার লাইন কেটে দিলে আপনি কি করবেন? আমি মিলের লোক ধরে জেল দিলে আপনার লজ্জা থাকে কোথায়? কারণ সে তো আপনারই বন্ধু , আপনারই সহকর্মী। আমি যদি ইউনিয়ন পরিষদের কোন লোককে ধরে নেই, তাহলে ওই ওয়ার্ডের মেম্বারের লজ্জা থাকে কোথায়? এগুলো বুঝতে হবে।
ডিসি বলেন, তিতাসের এমডি খুব ভালো একটা কথা বলেছেন, যে আপনারা আমার লোক ধরেন। আমিও ইতিমধ্যে দুই-তিন জন লোক ধরেছিল। এলাকায় তারা তিতাসের লোক, বিদ্যুতের লোক বলে পরিচিত। তারা অবৈধ লাইন দেয়। ধরার পর দেখা গেলো যে না। কোন এক সময় ঠিকাদারের পক্ষে সেই লোকটা ওই এলাকায় কাজ করেছিল। তারপর থেকে ওই এলাকায় সে তিতাসের লোক বা বিদ্যুতের লোক হিসেবে পরিচিতি পায়। তারপর থেকে সে ওই পরিচয় দিয়ে এলাকায় অবৈধ লাইন দিয়ে লোকেদের বোকা বানাচ্ছে। এটা এক ধরনের প্রতারণা। চেয়ারম্যান সাহেবের বলছি, এই প্রতারকদের যেখানেই দেখবেন আপনারা তাদেরকে ধরে পুলিশ কিংবা আমাদের জানান।
ডিসি আরও বলেন, আমি আপনাদের এই ছোট্ট জেলায় এসেছি। যদিও নারায়ণগঞ্জ বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সবচেয়ে ধনী জেলা। আমি বিশ্বাস করি, আমরা কাজ করে এই জেলার ভাবমূর্তিকে সারা বাংলাদেশের মধ্যে আরো উদ্ভুত করব। এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আমরা বোঝাতে সক্ষম হবো যে এই নারায়ণগঞ্জে গ্যাস সহ সকল কার্যক্রম পরিচ্ছন্নভাবে পরিচালনা করা হচ্ছে।
এ সময় জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান, তিতাসের এমডি হারুনুর রশিদ, বিকেএমইএ-এর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রমূখ।