নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষণার পরপরই সরগরম হয়ে উঠেছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ড। সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রদচারনায় মুখরিত বিভিন্ন ওয়ার্ড। সংরক্ষিন নারী কাউন্সিলর ও সাধারণ কাউন্সিল পদে সম্ভাব্য প্রার্থীরা গণসংযোগ শুরু করে দিয়েছেন। যদিও গত এক মাস ধরে তাদের প্রচরণা চলছিল। কিন্তু নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা না হওয়ায় তারা কিছুটা দো-টানার মধ্যে ছিল। শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) নির্বাচন কমিশনের ৯১তম সভায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ভোটগ্রহণ আগামী ১৬ জানুয়ারি নির্ধারণ করে তফসিল ঘোষণা করা হয়। এরপরই সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে নেমে পড়েছেন।
মঙ্গলবার বিকালে ও সন্ধ্যার পর বিভিন্ন ওয়ার্ডে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সম্ভাব্য প্রার্থীরা গণসংযোগ করছেন। তাদের কেউ উঠান বৈঠক, কেউ নির্বাচনী সভা করছেন। ভোটারদের মধ্যেও একটা নির্বাচনী আমেজ শুরু হয়েছে।
মঙ্গলার তফসিল ঘোষণার পর বিকালে ও সন্ধ্যায় বিভিন্ন ওয়ার্ডে সম্ভাব্য প্রার্থীদের গণসংযোগের খবর পাওয়া গেছে। বিশেষ করে সংরক্ষিত (১৬, ১৭ ও ১৮) ওয়ার্ডের সম্ভাব্য নারী কাউন্সিলর জুয়েলী ভুইয়া, ১৭নং ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবু, সিদ্ধিরগঞ্জের ৬নং ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি, ৭নং ওয়ার্ডে মিজানুর রহমান রিপন, ১নং ওয়ার্ডে আনোয়ার ইসলাম, ২নং ওয়ার্ডে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক রাজু, ১০নং ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর ইফতেখার আলম খোকন, ৮নং ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর রুহুল আমীন মোল্লা, ১২নং ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর শওকত হাসেম শকু, ১৮নং ওয়ার্ডে ফজলুল হক উকিল ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক, মকসুদুর রহমান জাবেদ, ১৩ নং ওয়ার্ডে রবিন খান, ৪,৫,৬ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মনোয়ারা বেগম, ২১নং ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর হান্নান সরকার, ২২নং ওয়ার্ডে সুলতান আহমেদ, খান মাসুদ, ছাত্রলীগ নেতা জরি উদ্দিন, মুরগী শাহ আলমসহ অর্ধ শতাধিক গণসংযোগ শুরু করে দিয়েছেন।
এদিকে আওয়ামীলীগের দলীয় সমর্থন পাওয়ার জন্য আওয়ামীলীগ ঘরোনার সম্ভাব্য প্রার্থীরা শীর্ষ নেতাদের দ্বারে দ্বারে দৌড়ঝাপ শুরু করে দিয়েছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কারা পাচ্ছেন দলীয় সমর্থন তা জানতে আরও কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে। এছাড়া দলীয় সমর্থন না পেলেও অনেকেই প্রার্থী হবেন বলে দৃঢ প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন ভোটারদের কাছে। তারা বললেন, দলীয় সমর্থন পেলেও আছি না পেলেও আছি। ফলে ক্ষমতাসীন দলের একাধিক প্রার্থীকে একই ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেখা যাবে।
ওদিকে মেয়র পদে বর্তমান মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী ছাড়া জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহিদ মো: বাদল, মহানগর আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহসভাপতি চন্দনশীল ও সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহাও দলীয় মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন। শেষ পর্যন্ত আওয়ামীলীগের সমর্থিত চুড়ান্ত মেয়র প্রার্থী কে হচ্ছেন তার সিদ্ধান্ত দিবেন দলের হাই কমান্ড। তবে দলীয় মনোনয়ন বাগিয়ে নিতে সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীদের তৎপরতা থেমে নেই।
প্রসঙ্গত ঘোষিত তফসিল অনুয়ায়ী আগামী ১৬ জানুয়ারি ভোটগ্রহণ। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ আগামী ১৫ ডিসেম্বর। এরপর ২০ ডিসেম্বর মনোনানয়পত্র যাচাই-বাছাই চলবে। বাছাইয়ে বৈধ প্রার্থীরা ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে পারবেন। দুই সপ্তাহের প্রচারণা শেষে নাসিক নির্বাচনের ভোট নেওয়া হবে ১৬ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
উল্লেখ ২০১১ সালের ৫ মে সিদ্ধিরগঞ্জ, কদমরসূল ও নারায়ণগঞ্জ পৌরসভাকে ২৭টি ওয়ার্ডে বিন্যস্ত করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন গঠন করা হয়। ওই বছরের ৩০ অক্টোবর প্রথমবারের মতো নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে আওয়ামীলীগের সমর্থিত প্রার্থী শামীম ওসমানকে পরাজিত করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ডা. সেলিনা হায়াত আইভী মেয়র নির্বাচন হন। ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর দ্বিতীয় মেয়াদের নির্বাচনেও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খানকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচন হয়েছেন ডা. আইভী।