রুদ্রবার্তা২৪.নেট: ১৯৭১ সালে বাঙালি মুক্তিযোদ্ধারা ডুবিয়ে দিয়েছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গোলাবারুদ বহনের কাজে ব্যবহৃত ‘এমভি একরাম’ নামের যুদ্ধজাহাজটি। মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের স্মারক হিসেবে ‘এমভি একরাম’ জাহাজটি সংরক্ষণে উদ্যোগ নিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এরই ধারাবাহিকতায় জাহাজটিকে ঘিরে নারায়ণগঞ্জে জাদুঘর নির্মাণের পরিকল্পনা করছে মন্ত্রণালয়। আগমী প্রজন্ম যাতে মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের গাঁথা সম্পর্কে জানতে পারে সেজন্য এই উদ্যোগ, বলছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
বুধবার (৪ আগস্ট) বিকেলে জাদুঘর নির্মাণের জন্য উপযুক্ত স্থান নির্বাচনে সরেজমিন পরিদর্শনে আসেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, এই মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী শাহ্জাহান খান, নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তারা। নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর ও বন্দর উপজেলার চারটি স্থান পরিদর্শন করেছেন বলে সাংবাদিকদের জানান মন্ত্রী মোজাম্মেল হক।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সূত্রে জানা যায়, কাঁচপুরের ল্যান্ডিং স্টেশন, বন্দরের সমরক্ষেত্র ও মেরিন টেকনোলজির সামনের স্থানসহ চারটি স্থান প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করা হয়েছে। এই চারটি স্থানই মন্ত্রী ও অন্যান্যরা পরিদর্শন করেছেন। এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে পরামর্শক কমিটি গঠন করা হবে। পরামর্শক কমিটির পরামর্শের পর সিদ্ধান্ত দেবে সরকার।
মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, “মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর দখলে থাকা ২৬টি জাহাজ ডুবিয়ে দিয়েছিল মুক্তিযোদ্ধারা। ১৯৭১ সালের ১৫ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধারা এই ‘অপারেশন জ্যাকপট’ চালিয়েছিলেন। একদিনে তারা ২৬টি জাহাজ ডুবিয়ে দিয়েছিল। সেই স্মৃতিকে সংরক্ষণ করার জন্য ‘এমভি একরাম’ জাহাজের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করে সংরক্ষণ করেছি। আমরা একটি জাদুঘর নির্মাণ করে এটিকে সেখানে সংরক্ষণ করতে চাই। যাতে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম এবং দেশি-বিদেশি পর্যটকরা আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের গৌরবগাঁথা জানতে পারে। এবং পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর কলঙ্কজনক অধ্যায়ও যেন মানুষ জানতে পারে। সেইজন্য আমরা এটিকে সংরক্ষণ করতে চাই।”
তিনি আরও বলেন, “জায়গা নির্ধারণের কার্যক্রম চলছে। কাঁচপুর ও বন্দর এলাকায় চারটি স্থান আমরা প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করেছি। কোন জায়গায় এটি করা যায় সেজন্য সরেজমিনে আমরা পরিদর্শন করলাম। নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রীও এসেছেন। কোন জায়গাটি ভালো হবে সে বিষয়ে পরামর্শকদের পরামর্শ নেবো।”
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর গোলাবারুদ বহনের কাজে ব্যবহৃত হয়েছিল এমভি একরাম। মুক্তিযোদ্ধারা চাঁদপুরের ডাকাতিয়া নদীতে এটি ডুবিয়ে দেন। জাহাজটি ১৯৬৫ সালে হল্যান্ডে নির্মিত হয়। একই বছরের ১৯ ফেব্রæয়ারি জাহাজটি রেজিস্ট্রেশন হয় এমভি একরাম নামে। স্বাধীনতার পর জাহাজটি বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংকের অধীনে চলে আসে। ২০০৮ সালে বন্দরের সোনাকান্দা এলাকার মোক্তার হোসেন বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক থেকে নিলামে কিনে ডাকাতিয়া নদী থেকে একই বছরের ১৪ নভেম্বর জাহাজটি উদ্ধার করেন। পরে জাহাজটি বন্দরের সোনাকান্দায় শাহেন শাহ’র ডকইয়ার্ডে এনে রাখা হয়।
জাহাজটি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি হিসেবে সংরক্ষণের জন্য সারা দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে দাবি ওঠে। দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৯ সালের ১৭ আগস্ট মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এটিকে সংরক্ষণ করার সিদ্ধান্ত নেয়। মুক্তিবাহিনীর ডুবিয়ে দেওয়া পাকিস্তানি যুদ্ধজাহাজ ‘এমভি একরাম’ বন্দর উপজেলার মদনগঞ্জের কর্ণফুলী ডকইয়ার্ডের সামনে শীতলক্ষ্যা নদীতে ভাসমান অবস্থায় রয়েছে।