রুদ্রবার্তা২৪.নেট: নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুডস লিমিটেডের পুড়ে যাওয়া কারখানা ভবনটি পরিদর্শন করেছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত তদন্ত দল। শনিবার (১৭ জুলাই) তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এই দলের সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশে কারখানায় বা কর্মস্থলে অগ্নিকান্ডে হতাহতের ঘটনা এটাই প্রথম না। যেসব কারণে অগ্নিকান্ডে সাধারণ মানুষ অকালে মারা যাচ্ছে তা চাইলে দূর করা সম্ভব। কিন্তু তদন্ত কমিটি এইসব ঘটনায় রিপোর্ট প্রকাশ করে না। দোষীরাও শাস্তি পায় না। ফলে যে প্রতিকার করার দরকার তাও করা হয় না। এই ঘটনাগুলো বার বার ঘটতে থাকে। রানা প্লাজা বা তাজরীনের ঘটনার এত বছর পরেও বিচার করা হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘পুরো দেশে কারখানাগুলো যেভাবে চলে, যে পরিবেশে শ্রমিকরা কাজ করে, সরকারি দপ্তরগুলো যে ধরনের দায়িত্ব পালন করে বা করে না; সেগুলোর যদি প্রতিকার না হয় তাহলে এ ধরনের ঘটনা বার বার ঘটতে থাকবে। দুর্ঘটনার অনুক‚ল পরিবেশ কীভাবে তৈরি হলো তা খুঁজছি। ভবনটিতে আমরা কোনো বহির্গমন (এক্সিট) সিড়ি খুঁজে পাই নাই। কারখানা ভবন চারদিকে খোলা থাকতে হয়। অথচ এইখানে দু’টি দিক বন্ধ ছিল। এই ধরনের সকল বিষয়ে আমরা তদন্ত করবো। আমাদের দেখা দরকার এখানে মালিক পক্ষের দায় কতটুকু এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর দায় কতটুকু।’
অগ্নিকান্ডের ঘটনায় গঠিত নাগরিক তদন্ত কমিটির আহŸায়ক ব্যারিস্টার জোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘আমরা সশরীরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত দেওয়ার মত পরিস্থিতিতে আমরা এখনও আসিনি। কারখানা কর্তৃপক্ষের থেকেও অন্যান্য যা যা তথ্য লাগে তা নেবার চেষ্টা করবো। পাশাপাশি এই কারখানা পরিচালনার সময় যে সরকারি দপ্তরগুলোর ভূমিকা থাকার কথা ছিল বা থাকে তাদের থেকে ডকুমেন্ট নিবো, তাদের কার কি ভূমিকা ছিল সেগুলো দেখবো।’ এ সময় এই কমিটির সদস্যসচিব অ্যাড. মাহবুবুর রহমান ইসমাইলসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে পুড়ে যাওয়া কারখানা ভবনটিতে অর্ধগলিত হাড় দেখতে পেয়েছেন বলে দাবি তদন্ত দলের সদস্যদের। ভবনটির চতুর্থ তলায় হাড়গুলো দেখতে পান বলে জানান তারা। হাড়গুলো কোন নারী শ্রমিকের বলে ধারণা তাদের। নাগরিক তদন্ত কমিটির সদস্য ও গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার বলেন, চতুর্থ তলায় দক্ষিণ-পূর্ব পাশে একটি পাজামা সদৃশ বস্তু দিয়ে মোড়ানো হাড় দেখতে পেয়েছেন। ধারনা করা হচ্ছে এটা কোন নারী শ্রমিকের কোমড়ের অংশ। ভবনটির এই কক্ষটি দুর্গন্ধে ভরা ছিল। এই দুর্গন্ধ রানা প্লাজা ও তাজরিনের ঘটনার পরও তারা পেয়েছিলেন।
তবে এই বিষয়ে বিকেলে নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক তানহারুল ইসলাম বলেন, তিনি ওই তদন্ত দলের সাথেই ছিলেন। তবে এমন কিছু তিনি দেখতে পাননি। হাড়ের খবর পাওয়ার পর সেখানে তিনি পুনরায় গিয়েছেন এবং কিছুই পাননি বলে দাবি করেন।
গত ৮ জুলাই বিকেলে রূপগঞ্জ উপজেলার কর্ণগোপ এলাকায় সজীব গ্রæপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হাসেম ফুডস লিমিটেড কারখানার ছয়তলার একটি ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এতে প্রাণ হারান কারখানার ৫১ জন শ্রমিক-কর্মচারী। ঘটনার পরদিন রাতে এই ঘটনায় রূপগঞ্জের ভুলতা ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক নাজিম উদ্দিন বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন। রূপগঞ্জ থানা দায়ের করা ওই মামলায় আসামি করা হয় সজীব গ্রæপের চেয়ারম্যান এম এ হাসেম, তার চার ছেলে ও তিন কর্মকর্তাকে। তাদের মধ্যে ছয়জন বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। এই মামলার পর শ্রম আদালতে প্রতিষ্ঠান বিরুদ্ধে মামলা করলো কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর।