মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩৯ পূর্বাহ্ন

‘জুলাই বিপ্লবে’ শহিদদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা হবে: প্রধান উপদেষ্টা

  • আপডেট সময় সোমবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৪.০৩ এএম
  • ২৪ বার পড়া হয়েছে

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘জুলাই বিপ্লবে’ শহিদ সকলের স্বপ্ন পূরণ করা হবে। রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর তেঁজগাওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। এ সময় তিনি সবাইকে ‘জুলাই নির্যাতনের’ প্রকৃত চিত্র তুলে ধরার আহ্বান জানান।
প্রধান উপদেষ্টার দৈনিক কার্যসূচি অনুযায়ী, এদিন বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের শাপলা হলে এ মতবিনিময় সভা চলে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এতদিন চুপচাপ শুয়ে শুয়ে স্বপ্নের মধ্যে আনন্দ সহকারে লুটপাট করে যাচ্ছিল। তাদের স্বপ্ন শিক্ষার্থীরা ভেঙে দিয়েছে। তারা কী এখন চুপচাপ বসে থাকবে? মোটেও না। তারা চেষ্টা করবে তোমাদের যেন দুঃস্বপ্নে লুকিয়ে দেওয়ার। তারা চেষ্টার ত্রুটি করবে না। তাই যেটা শুরু করছো, সেই কাজ সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত এখান থেকে বেরিয়ে যেও না।

 

তিনি বলেন, বাংলাদেশের জন্ম থেকে এই সুযোগ আর আসেনি। যে সুযোগ তোমরা আমাদের হাতে তুলে দিয়েছ, এটা যেন হাতছাড়া না হয়। এই সুযোগ হাত ছাড়া হলে বাংলাদেশ আর রাষ্ট্র থাকবে না। এটা শুধু রাষ্ট্র না, পৃথিবীর সম্মানিত রাষ্ট্রে যেন পরিণত হয়।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, শিক্ষার্থীদের দেখছি আর ভাবছি, কী একটা স্বপ্ন আমাদের সামনে, জাতির সামনে তোমরা নিয়ে এসেছ।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যারা শহিদ হয়েছে, তাদের স্মরণ করে তিনি বলেন, যারা শহিদ হয়েছে আজ তারা আমাদের সঙ্গে বসতে পারতো। কিন্তু সেই সুযোগ তাদের দেওয়া হয়নি। যখন হাসপাতালে আহতদের দেখার জন্য যাই তাকাতে কষ্ট হয়।

তিনি আরও বলেন, একজন তরুণকে যখন দেখতে যাই, তখন সে জিজ্ঞেস করে ‘স্যার, ক্রিকেট খেলব কীভাবে?’ ক্রিকেট তার মাথা থেকে সরছে না। যতবার দেখি, মনে প্রশ্ন জাগে, আমরা এমন বাংলাদেশ বানিয়েছি?

সরকারপ্রধান বলেন, কালকে একটা হাসপাতালে গেলাম, আবার সেই দৃশ্য। তরুণ প্রাণ, অনেকের মাথার খুলি উড়ে গেছে। অনেকের শরীরে গুলি রয়ে গেছে। বেঁচে আছে।

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, যতবার শুনি, যতবার দেখি, আবার নতুন করে প্রতিজ্ঞা করতে হয়; যে স্বপ্নের জন্য তারা প্রাণ দিয়েছে, সেই স্বপ্নকে আমরা বাস্তবায়ন করব। এটা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, আমি সাক্ষাতের সময় যে দৃশ্য দেখছি, সেটা তো সবাই দেখছে না। যারা হাসপাতালে আসছেন, তারা হয়তো অনুধাবন করতে পারছেন। মানুষকে জানাতে হবে, বোঝাতে হবে। কী নৃশংসতা ছিল।

মতবিনিময়ে শিক্ষার্থীরা অন্তর্বর্তী সরকারকে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দেন এবং বিভিন্ন দাবি জানান।

রাজনীতিকে ক্যাম্পাসের বাইরে রাখার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, ক্যাম্পাসে, ক্লাসে একজন শিক্ষক শুধু শিক্ষক থাকবেন, একজন ছাত্র শুধু ছাত্র থাকবেন। কোনও ট্যাগধারী ছাত্র এবং শিক্ষককে আমরা ক্যাম্পাসে দেখতে চাই না।

যারা বিদেশে উচ্চশিক্ষায় গেছেন, তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা এবং দেশে তাদের মেধার মূল্যায়ন করে দেশের কাজে লাগাতে অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেন শিক্ষার্থীরা।

তারা বলেন, গ্রাজুয়েশনের পর বিদেশে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীরা দেশে ফিরছে না বলে বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাংকিং বাড়ছে না। দেশে আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব তৈরি হচ্ছে না।

টাকা পাচারের চেয়ে মেধা পাচার বেশি ভয়ানক বলে মন্তব্য করেন একজন শিক্ষার্থী।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর হিসেবে যারা বিভিন্ন সেক্টর কর্মরত আছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেন শিক্ষার্থীরা।

তারা বলেন, ফ্যাসিবাদী দোসররা বর্তমানে বিভিন্ন সেক্টরে যারা আছে তাদের আমরা আর দেখতে চাই না। অতিদ্রুত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

মব জাস্টিস নিয়ন্ত্রণকে এই মুহূর্তে একটি প্রধান কাজ হিসেবে বিবেচনা করে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান শিক্ষার্থীরা।

তারা বলেন, মব জাস্টিস নিয়ন্ত্রণ করা, এই মুহূর্তে প্রধান কাজের একটি। এটা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে যদি সমাজের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে যায়, কোনো কুচক্রী মহল এই দুরবস্থার সুযোগ নিয়ে আমাদের ভেতরে প্রবেশ করে আমাদের ঐক্য নষ্ট করার চেষ্টা করবে।

সরকারি হাসপাতালের অনিয়মের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে আন্দোলনের সমন্বয়ক ও এক নারী মেডিক্যাল শিক্ষার্থী বলেন, যত দ্রুত সম্ভব কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে রোগীদের যাতে হেনস্তা না হতে হয়, সেই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। আমরা চাই, চিকিৎসা সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা হোক। যেখানে শুধু চিকিৎসক না, রোগীদেরও সেবা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়ে থাকে।

তিনি বলেন, সিভিল সার্ভিস, জুডিশিয়ারি সার্ভিসের মতো বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিসের অধীনে সমস্ত মেডিক্যাল শিক্ষার্থী ও চিকিৎসকদের এর অধীনে আনা যায়, তাহলে অনেক স্বচ্ছতা ও সেবার মান বৃদ্ধি পাবে।

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সেক্ষেত্রে উৎপাদন বাড়ানো এবং বিপণন ব্যবস্থার দিকে নজর দিতে হবে। সার-কীটনাশক, কৃষি সরঞ্জামে ভর্তুকি এবং দাম কমাতে হবে।

আগামীতে মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করতে বলেন তারা।

মতবিনিময় সভায় ড. মুহাম্মদ ইউনূস শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন, তাদের বিভিন্ন পরামর্শ মনোযোগ দিয়ে শোনেন।

সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন— আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল; বন, পরিবেশ ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান; মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ ফরিদা আখতার, তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2021 rudrabarta24.net
Theme Developed BY ThemesBazar.Com

sakarya bayan escort escort adapazarı Eskişehir escort