শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:৫৮ অপরাহ্ন

জনগণ সাফল্য বা ব্যর্থতার বিচার করবে : সংসদে প্রধানমন্ত্রী

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০২৩, ৪.০৮ এএম
  • ৮৩ বার পড়া হয়েছে

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা সরকারের ব্যর্থতা থাকলে তা যাচাইয়ের ভার জনগণের ওপর ছেড়ে দিয়ে কোন ধরনের ব্যর্থতা থাকলে তা খুঁজে বের করার জন্য বিরোধী দলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘সরকারের সফলতা বা ব্যর্থতা যাচাই করবে দেশের জনগণ। এটা যাচাই আমার দায়িত্ব নয়। তবে, সততা ও সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে জনগণের কল্যাণ বিবেচনা করে কাজ করলে ব্যর্থ হব কেন?’
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে আজ জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত ৩০ মিনিটের প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমামের সম্পুরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ উত্তরদানের পাশাপাশি তাঁকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, সততা নিয়ে কাজ করলে ব্যর্থ হতে হবে কেন? প্রশ্নকর্তার যখন এতই আগ্রহ তাহলে আমার ব্যর্থতাগুলো আপনিই খুঁজে বের করে দিন, আমি সংশোধন করে নেব।

তাঁর রাজনৈতিক জীবনের ইতিবৃত্ত তুলে ধরে ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আসার ঘটনা উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, জাতির পিতার আদর্শকে প্রতিষ্ঠিত করার প্রত্যয় নিয়ে দেশে ফিরে এসেছিলাম। চারণের বেশে সারা বাংলাদেশ ঘুরেছি। বাংলাদেশকে চিনেছি, জেনেছি। সরকার গঠনের পর তৃণমূলের মানুষ যাতে ভালো থাকে সেই আকাক্সক্ষা নিয়েই কাজ করেছি। তার সুফল এখন জনগণ পাচ্ছে।
তিনি বলেন, ১৪ বছর আগের বাংলাদেশ আর এখনকার বাংলাদেশে যে আমূল পরিবর্তন সেটা আমরা বয়োবৃদ্ধ যারা আছি তারা জানি। কিন্তু, আজকের প্রজন্ম জানবে না। যদি সততা নিয়ে, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে জনগণের কল্যাণে কি কাজ করতে হবে- সেটা বিবেচনা করে যদি কাজ করা যায়, তাহলে ব্যর্থ হবো কেন? কোথায় সাফল্য, কোথায় ব্যর্থতা সেটা জনগণই বের করবে।

ইতিহাস বিকৃতকারীদের বিচারের আওতায় আনা প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির অপর সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমানের সম্পুরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এদের বিচার করতে গেলে তো কাকে রেখে কাকে বিচার করবো সেটাই একটা প্রশ্ন। ’৭৫ পরবর্তী অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করা সবাইতো ইতিহাস বিকৃত করেছে। যারা ইতিহাস বিকৃতি করেছে ইতিহাসই তাদের বিচার করে দিয়েছে। ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না।
তিনি বলেন, মিথ্যা দিয়ে সত্যকে ঢেকে রাখা যায় না। যারা ইতিহাস বিকৃতি করেছে তাদের চরিত্রটা মানুষের কাছে প্রকাশ পেয়েছে। কত জঘণ্য কাজ তারা করে গেছে। তাই, যারা সত্যটাকে মিথ্যা দিয়ে ঢাকতে চেয়েছিল তারাই আজকে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে চলে গেছে। সত্য উদ্ভাসিত হয়েছে। সত্য অনেক কঠিন। তবে, এর জয় অবসম্ভাবী। বিচার প্রাকৃতিকভাবেই তাদের হচ্ছে। সত্য ইতিহাস আর কেউ বিকৃত করতে পারবে না।
সরকারি দলের সংসদ সদস্য এ কে এম রহমতুল্লাহর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে জিয়াউর রহমান বন্দী যুদ্ধাপরাধীদের মুক্ত করে দেয়। তাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করে। সংবিধানের দু’টি ধারায় পরিবর্তন এনে তাদের রাজনীতি করার সুযোগ করে দেয়। ভোটের অধিকার দেয়।

সংসদ নেতা বলেন, জিয়াউর রহমান গোলাম আযমসহ অনেক যুদ্ধাপরাধীকে পাকিস্তান থেকে ফিরিয়ে এনে নাগরিকত্ব দেয়। জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের উপদেষ্টা বানায়, মন্ত্রী বানায়। তার স্ত্রী খালেদা জিয়াও ক্ষমতায় এসে এদের কেবিনেটে স্থান দেয়, মন্ত্রী বানায়। এভাবে যুদ্ধাপরাধীদের প্রশ্রয় দেয়া একটি জাতির জন্য কলঙ্কজনক। তিনি বলেন, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যারা জিয়ার সঙ্গে হাত মেলাতে রাজি ছিল না তাদের নাম বাদ দেয়া, অপমানিত করা এবং যারা মুক্তিযোদ্ধা নয় তাদের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান তারা দিতে চায়নি।

’৭৫ এর পরে এমন একটা সময় গেছে যে মানুষ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে সেটা বলতেও ভীতসন্তস্ত্র ছিল উল্লেখ করে সংসদ নেতা বলেন, তখন একে একে মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের হত্যা করা হয়। চাকুরিচ্যূত করা হয়েছে, অপমানিত করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের চাকরিও দেয়া হতো না। এমন ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। সঙ্গে সঙ্গে ইতিহাসও বিকৃতি করা হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে ফেলা হয়। সেগুলো যাচাই-বাছাই করে অনেকগুলো ইতোমধ্যে পরিষ্কার করে দেয়া হয়েছে। আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা যাতে তালিকায় থাকে সেই প্রচেষ্টা করার।

বাংলাদেশের যুদ্ধটা জনযুদ্ধ ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মনে রাখতে হবে এখানে গেরিলা যুদ্ধ হয়েছে। অনেক সময় কোন কোন ক্ষেত্রে বাড়ির মুরব্বিকে শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান হতে হয়েছে। তাদের মেম্বার করে রেখেছে। কিন্তু বাড়ির ভেতরে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিয়েছে। তাদের অস্ত্র রাখতে দিয়েছে। মেয়েরা রান্না করে খাইয়েছে। অপারেশন চালিয়েছে। যে কারণে জাতির পিতা একটি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু যারা গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও নারী ধর্ষণ করেছিল তাদের ক্ষমা করেননি, তিনি বিচার করেছিলেন। কিন্তু পঁচাত্তর পরবর্তীকালে সবকিছু পাল্টে যায়। মনে হয়েছিল, মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধ করে অপরাধ করে ফেলেছে। স্বাধীনতা বিরোধীতা ক্ষমতার দাপট দেখিয়েছে। তবে, বর্তমানে সেই অবস্থা নেই।

জামালপুর-৫ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মোজাফফর হোসেনের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প ব্যাপকভাবে বিস্তৃত হয়েছে। কিন্তু, সেখানে টেকনিক্যাল লোক পাওয়া কঠিন। অনেকই বিদেশ থেকে লোক নিয়ে এসে কাজ দেওয়া হয়। সরকার টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছে। যাতে দক্ষ জনগোষ্ঠি তৈরি হয়। তাদের চাকরির অভাব নেই। পাস করার সঙ্গে সঙ্গে সঙ্গে তারা তৈরি পোশাক কারখানাসহ বিভিন্ন কারখানায় চাকরি পায়।

টেক্সটাইল শিক্ষার্থী নয়, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যারিস্টারিসহ অন্যান্য বিষয়ে পাস করে বিসিএস দেওয়ার প্রবণতা আছে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। এত বেশি ক্যাডার সিস্টেম হয়ে গেছে। আমরা কিন্তু ইতোমধ্যে অর্থনীতি ও প্রশাসন ক্যাডারকে এক করে দিয়েছি। এক্ষেত্রে আরও কতটা সংকুচিত করা যায় সেটা ভালো। নতুন নতুন ক্যাডার সৃষ্টি করলেই যে চাকরির দুয়ার খুলে যাবে, ব্যাপারটা তেমন নয়। চাকরি করাটা তাদের ইচ্ছের উপর নির্ভর করে। অনেকক্ষেত্রে আমাদের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়াররা কাজ পেয়ে যাচ্ছে। এই মুহূর্তে আমাদের নতুন করে কোন ক্যাডার তৈরি করার পরিকল্পনা নেই। তবে, ভবিষ্যতে এটা যাচাই-বাছাই করে দেখতে পারি।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2021 rudrabarta24.net
Theme Developed BY ThemesBazar.Com

sakarya bayan escort escort adapazarı Eskişehir escort