জন্মলগ্ন থেকেই হেফাজতে ইসলাম অরাজনৈতিক সংগঠন। কাউকে ক্ষমতায় বসানো বা নামানো হেফাজতের কাজ নয়। ইসলামের হেফাজত করাই হেফাজতে ইসলামের কাজ। হোক সেটা ব্যক্তিগত, পারিবারিক বা রাষ্ট্রীয় জীবনে। গুটিকয়েক বিশৃঙ্খলাকারী হেফাজতের যৌক্তিক আন্দোলনকে পুঁজি করে সমাজে বিশৃঙ্খল সৃষ্টিতে লিপ্ত হয়েছে। এর দায় বর্তাচ্ছে সাধারণ ওলামা-মাশায়েখদের ওপরে।
শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন।
হেফাজতের নায়েবে আমীর আল্লামা শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরীর সভাপতিত্বে সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। বক্তব্য দেন হেফাজতের মহাসচিব মাওলানা নূরুল ইসলাম জিহাদী।
মহাসচিব মাওলানা নূরুল ইসলাম জিহাদী বলেন, ইসলামকে হেফাজতের লক্ষ্যে ২০১০ সালে মাওলানা আহমদ শফীর হাত ধরে হেফাজতে ইসলামের জন্ম। প্রতিষ্ঠার পর নানা ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করেও ১৩ দফায় অটল রয়েছে হেফাজত। এর বাইরে হেফাজতের কোনো কর্মকাণ্ড নেই। কাউকে ক্ষমতায় বসানো বা নামানো হেফাজতে ইসলামের কাজ নয়। জাতীয় নির্বাচন তো দূরের কথা, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও হেফাজতের কোনো প্রার্থী নেই।
তিনি আরও বলেন, কিছুদিন আগে যে কারণেই হোক দেশে হেফাজতের ডাকে হারতাল পালিত হয়েছে। এ হরতালকে কেন্দ্র করে কিছু দুর্ঘটনা ও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। সাধারণ ছাত্রদের মাঝে কিছু বিশৃঙ্খলাকারী অনুপ্রবেশ করে জ্বালাও-পোড়াও এবং ভাঙচুর করেছে। মাদ্রাসার ছাত্ররা কখনোই এর সঙ্গে যুক্ত ছিল না। মাদ্রাসায় কারো জানমালের ক্ষতির শিক্ষা দেওয়া হয় না। কিন্তু সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাধারণ আলেম-ওলামাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। হেফাজত তাদের মুক্তি চায়।
নায়েবে আমীর মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী শারীরিক অসুস্থতার কারণে তার পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মাওলানা হারুন আজীজী নদভী। লিখিত বক্তব্যে মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, হেফাজতে ইসলাম কোনো রাজনৈতিক দল নয়। জাতীয় ও আঞ্চলিক নির্বাচনে হেফাজতের কোনো প্রার্থিতা নেই, প্রোপাগান্ডাও নেই। কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে হেফাজতের সংশ্লিষ্টতা নেই। কাউকে ক্ষমতায় বসানো বা ক্ষমতা থেকে নামানো হেফাজতের এজেন্ডা নয়। হেফাজতের ব্যানারে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করারও কোনো সুযোগ নেই। হেফাজতে ইসলাম শুধু ইসলামি শিক্ষা, সংস্কৃতি ও তাহজিবের বিকাশ এবং নাস্তিকতাবাদের প্রতিরোধে কাজ করবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, হেফাজত অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হলে অনুপ্রবেশকারীদের কাছ থেকে সাবধান থাকা উচিত। হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সহিংসতার ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত নয়- এমন সাধারণ আলেমদের মুক্তির ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নিয়েছে। কিন্তু জামিনের বিষয়টি সম্পূর্ণ আদালতের এখতিয়ার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রক্রিয়াটা ত্বরান্বিত করবে। তিনি আরও বলেন, কুরআন-সুন্নাহ বাইরে কেউ প্রোপাগান্ডা ছড়াতে চাইলে সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে। শুধু মুসলাম নয়, কারো বিশ্বাসের প্রতি অমর্যাদা করতে দেব না।