রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫৪ পূর্বাহ্ন

কলাগাছের আঁশ থেকে শাড়ি উদ্ভাবনে বান্দরবান জেলা প্রশাসকের চমক

  • আপডেট সময় সোমবার, ৩ এপ্রিল, ২০২৩, ৪.০৪ এএম
  • ১৯১ বার পড়া হয়েছে

কলাগাছের তন্তু তথা আঁশ থেকে তৈরি সুতা। আর সেই সুতা তাঁতে বুনে শাড়ি উদ্ভাবনে চমক দেখালেন বান্দরবানের ডিসি। কথাটি শুনতে আশ্চর্য লাগলেও এটিই সত্যি। গতকাল দুপুরে বান্দরবান জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি জানান, পরিত্যক্ত কলাগাছ থেকে সুতা তৈরি করে সেই সুতা দিয়ে জামদানি ডিজাইনের শাড়ি তৈরি করা হয়েছে। একটি পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে মনিপুরী নারীরা কলাগাছের সুতা দিয়ে শাড়ি তৈরি করে দেখিয়েছেন। বান্দরবান শহরের কাছে কালাঘাটা মণিপুরী পল্লীতে এই শাড়িটি তৈরি করেছেন মনিপুরী রাধা-বতি দেবী। দীর্ঘ ১৫ দিনের চেষ্টায় কলাগাছের তন্তু থেকে তৈরি এক কেজি কলা গাছের সুতা তাঁতে বুনে তৈরি করেছেন একটি শাড়ি। শাড়িটির ডিজাইন অনেকটাই জামদানি শাড়ির মত। এই ডিজাইনটিকে মনিপুরীরা ‘মইরান’ বলে। কলাগাছের সুতা দিয়ে বোনা এই শাড়ি নিয়ে এখন এলাকায় হইচই পড়ে গেছে।

বান্দরবনের ডিসি জানান, প্রায় দেড়বছর আগে কলাগাছের তন্তু থেকে সুতা তৈরির একটি উদ্যোগ নেয়া হয়। নারীর কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী হওয়ার লক্ষ্য থেকে প্রকল্পটিতে প্রথমদিকে বেসরকারি এনজিও সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশন, গ্রাউস, উদ্দীপন ও লাফার্স সহায়তা দেয়। এছাড়া মহিলা বিষয়ক অধিদফতর ও উইমেন চেম্বার অব কমার্সও নানাভাবে সহায়তা দিয়েছে।

বর্তমানে কালাঘাটার গুণমনি মনিপুরী ও বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইং সাইং উ. নিনি দম্পতির বাসায় কলাগাছের সুতা দিয়ে শাড়ি ও নানা ধরনের হস্তশিল্প তৈরির কাজ চলছে। নিনি জানান, প্রথম দিকে কলাগাছের তন্তু থেকে সুতা তৈরি দেখে তিনি শাড়ি ও হস্তশিল্প তৈরিতে আগ্রহ দেখান। সে হিসেবে তার মণিপুরী স্বামীর নিকট আত্মীয় মনিপুরী শিল্পীদের এনে প্রথমে নানা ধরনের হস্তশিল্প কলমদানি, টেবিল ম্যাট, ফাইল হোল্ডার, কানের দুলসহ নানা ধরনের হস্তশিল্প তৈরি করেন। পরে সেই সুতা দিয়ে তাঁতে শাড়ি বানানোর উদ্যোগ নেন। কাঠের তৈরি তাঁত বানানো থেকে শুরু করে সুতা তৈরি সবদিকে সহায়তা দেন জেলা প্রশাসক।

তিনি আরো জানান, শাড়ি বানানোর জন্য সুদূর সিলেটের মনিপুরী পাড়া থেকে নিয়ে আসা হয় ৬৫ বছর বয়সী অভিজ্ঞ তাঁতি রাধা বতি দেবীকে। দীর্ঘ চেষ্টা চালিয়ে শাড়ি তৈরিতে সফল হন তিনি। রাধাবতি জানান, ৭৫ সাল থেকেই তিনি সুতা দিয়ে শাড়িসহ নানা কিছু তৈরি করতেন। কিন্তু কলা গাছের সুতা দিয়ে শাড়ি তৈরি সেটি ছিল তার কাছে একেবারেই নতুন। যেহেতু কলাগাছ থেকে সুতা তৈরি হয়েছে আর সেই সুতা দিয়ে শাড়ি বানাতে আপত্তি নেই। বান্দরবান জেলা প্রশাসকের অনুরোধের পর তিনি নেমে পড়েন কাজে। ১৫ দিনের চেষ্টায় আরো তিনজন সহযোগীকে নিয়ে তাঁতে বসে তৈরি করে করেন জামদানি ডিজাইনের কলা গাছের সূতা দিয়ে তৈরি শাড়ি। সাধারণ সুতায় ৫০০ গ্রাম দিয়ে যেখানে একটি শাড়ি তৈরি করা যায় সেখানে কলা গাছের সুতায় শাড়ি তৈরি করতে লাগে প্রায় এক কেজি। এখন এই শাড়ি দেখতে অনেকেই ছুটে আসছেন বাড়িতে।

এই সফলতাকে তিনি অনেক উপভোগ করছেন বলে জানান রাধা বতি। তবে এই শাড়ি কতটুকু স্থায়ী হবে, শাড়ি পড়তে মানুষ কতটুকু স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে এটি নিয়ে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেন। কলাগাছের সুতা তৈরিতে আরো গবেষণা করলে আরও সূক্ষ্ম ভালো সুতা তৈরি করতে পারলে ভালো শাড়ি তৈরি করা যাবে বলে জানান তিনি।

জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে কলাগাছের সুতা দিয়ে তৈরি নানা ধরনের হস্তশিল্প মানুষকে আকৃষ্ট করেছে। নানা জায়গায় তা সমাদ্রিত হয়েছে। এখন শাড়ি তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বান্দরবানের উৎপাদিত পণ্য দেশে-বিদেশে রপ্তানির পাশাপাশি গ্রামীণ নারীদের কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক সাফল্যে বড় অবদান রাখবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2021 rudrabarta24.net
Theme Developed BY ThemesBazar.Com

sakarya bayan escort escort adapazarı Eskişehir escort