কোভিড-১৯ মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তৃতীয় ঢেউও শুরু হয়েছে। মহামারীতে বয়স্ক ও অসুস্থদের ঝুঁকি বেশি। তার চেয়েও বেশি ঝুঁকিতে অন্তঃসত্ত্বা নারীরা।
গর্ভকালটা যে কোনো নারীর জন্যই শঙ্কার। এই সময়টায় শরীরে নানা রকম পরিবর্তন আসে। যখন-তখন হাসপাতালে নেওয়ার প্রয়োজন পড়তে পারে। কিন্তু আমাদের হাসপাতালগুলো এই সময়ে কতটা ভাইরাসমুক্ত।
করোনাকালে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য নানা কারণেই ঝুঁকিপূর্ণ।
এসব বিষয়ে যুগান্তরকে পরামর্শ দিয়েছেন জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের জীবাণুবিদ ডা. আয়শা আকতার।
গর্ভাবস্থায় শরীরে এমন কিছু পরিবর্তন ঘটে, যা শ্বাসতন্ত্রের ভাইরাল সংক্রমণের মতো গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি বাড়ায়, এমনকি গর্ভাবস্থার পরও এ ঝুঁকি বিদ্যমান।
এ ছাড়া গর্ভাবস্থায় রক্তজমাট বাঁধাজনিত ঝুঁকিও স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বেশি, যা গর্ভাবস্থার পরও অব্যাহত থাকতে পারে এবং গুরুতর অসুস্থতার কারণ হতে পারে।
কোভিড-১৯ আক্রান্ত গর্ভবতী মায়েরা নির্ধারিত সময়ের পূর্বে (৩৭ সপ্তাহের পূর্বে) সন্তান প্রসবের ঝুঁকিতে থাকেন। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে গর্ভের সন্তানের জন্যও এটি মারাত্মক বিপজ্জনক হতে পারে।
পঁচিশোর্ধ্ব বয়সে সন্তান ধারণ, পূর্বনির্ধারিত শারীরিক জটিলতা যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, শারীরিক স্থূলতা, কিডনি রোগ ইত্যাদি, জীবনযাপনের ধরন, কর্মপরিবেশ, খাদ্যাভ্যাস, ইত্যাদি বিষয়গুলো গর্ভকালীন করোনাজনিত স্বাস্থ্যঝুঁকির জন্য দায়ী।
এ ছাড়া তথাকথিত স্বাস্থ্যগত ও সামাজিক বৈষম্যগত কারণেও সমাজের বিভিন্ন স্তরে গর্ভবতী মায়েরা করোনাকালীন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন।
গর্ভকালীন ও গর্ভপরবর্তী সময়ে সুস্থতায় করণীয়
১. গর্ভকালীন এবং গর্ভ পরবর্তী সময়ে নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা পেতে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন। করোনাকালীন জরুরি প্রয়োজনে টেলিমেডিসিন সেবা নিতে পারেন।
২. কীভাবে নিজে সুস্থ থাকা যায় এবং গর্ভের বাচ্চা/ভূমিষ্ঠ শিশুর যত্ন নিতে হয় এ ব্যাপারে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৩. চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে শিশু ডেলিভারির সম্ভাব্য স্থান, সময় এবং উপায় বিষয়ে আগাম পরিকল্পনা করে রাখুন।
৪. গর্ভকালীন কিংবা প্রসবপরবর্তী সময়ে যদি মানসিক অবসাদ/দুশ্চিন্তায় ভুগে থাকেন অবশ্যই তা পরিবারের সদস্য এবং চিকিৎসককে অবহিত করুন।
৫. গর্ভকালীন যেসব নিয়মিত টিকা নিতে হয়, তা যথানিয়মে গ্রহণ করে নিজেকে ও গর্ভস্থ শিশুকে সুরক্ষিত রাখুন।
৬. গর্ভাবস্থায় গর্ভকালীন যে কোনো উপসর্গ, করোনা উপসর্গ কিংবা গর্ভ পরবর্তী যে কোনো শারীরিক অসুস্থতায় দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
৭. মারাত্মক করোনা উপসর্গ যেমন শ্বাসকষ্ট, ক্রমাগত বুকে ব্যথা অথবা চাপ অনুভূত হওয়া, অতিরিক্ত শারীরিক দুর্বলতা, অচেতন হয়ে যাওয়া কিংবা ত্বক, ঠোঁট কিংবা হাত-পায়ের নখ নীলচে বা বিবর্ণ হয়ে গেলে দ্রুততম সময়ে রোগীকে হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হবে।