বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ প্রাইমারি স্কুল ফুটবল টুর্নামেন্ট ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব গোল্ডকাপ প্রাইমারি স্কুল ফুটবল টুর্নামেন্টের মতো প্রতিযোগিতা নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, এই ধরনের টুর্নামেন্ট থেকেই বেরিয়ে আসবে আগামী দিনের বাংলাদেশের বিশ্বকাপ ফুটবল খেলোয়াড়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ভবিষ্যতে বিশ্বকাপ ফুটবলে খেলবে এবং সেসব খেলোয়াড় এই টুর্নামেন্টগুলো থেকেই বেরিয়ে আসবে।
প্রধানমন্ত্রী আজ রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ প্রাইমারি স্কুল ফুটবল টুর্নামেন্ট-২০২২ এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব গোল্ডকাপ প্রাইমারি স্কুল ফুটবল টুর্নামেন্ট-২০২২-এর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ভাষণ প্রদানকালে এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা প্রকৃত মেধাবীদের খুঁজে বের করতে সারা দেশে আরও বেশি করে আন্তস্কুল, আন্তউপজেলা, আন্তজেলা, আন্তকলেজ এবং আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজনের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, খেলাধুলার পাশাপাশি সংস্কৃতি চর্চা, গল্প, ইতিহাস, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক বই পড়ার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি যোগ্য নাগরিক হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের টেক্সট বইও পড়তে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশের মূলশক্তি উল্লেখ করে সেভাবে নিজেদের যোগ্য করে তৈরি করতে ভালোভাবে লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করারও আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘খেলাধুলা মানে শারীরিক ব্যায়াম, খেলাধুলা শারীরিক শক্তি জোগায় এবং উদার মনমানসিকতা গড়ে তোলে। পাশাপাশি, লেখাপড়ায়ও মনোনিবেশ করতে হবে। একটি স্বাধীন দেশের যোগ্য নাগরিক হিসাবে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে।’
শেখ হাসিনা আশা করেন, বাংলাদেশের শিশুরা আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় লেখাপড়া ও খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে চমৎকার প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে দেশের জন্য গৌরব বয়ে আনবে। তিনি বলেন, ‘আজ আমরা একটি ডিজিটাল বাংলাদেশে উন্নীত হয়েছি। এখন আমরা ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে একটি স্মার্ট বাংলাদেশে উন্নীত করতে যাচ্ছি। তোমরাই এই স্মার্ট বাংলাদেশের মূলশক্তি।’
এ সময় শেখ হাসিনা শিশুদের সবসময় সুশৃঙ্খলভাবে থাকার, অভিভাবক, শিক্ষক ও বাবা-মায়ের কথা মেনে চলার, বন্ধু, খেলার সাথী ও সহপাঠীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করার এবং অটিস্টিকসহ প্রতিবন্ধীদের সঙ্গে ভালো আচরণ করতে বলেন। তিনি বলেন, ‘তোমাদের নিজেদের ভালোভাবে গড়ে তুলতে হবে। এখন থেকে মাথায় রাখবে তোমাকে সর্বোচ্চ শিক্ষিত হতে হবে। তোমাকে একজন সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে হবে।’
এর আগে, প্রধানমন্ত্রী ঢাকা বিভাগের নালমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘাটাইল, টাঙ্গাইল ও চট্টগ্রাম বিভাগের বাঞ্ছারামপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত ফাইনাল খেলার দ্বিতীয়ার্ধ উপভোগ করেন। বঙ্গমাতা গোল্ডকাপের ফাইনাল ম্যাচে বাঞ্ছারামপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নালমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে হারিয়ে কাপটি অর্জন করে।
ফাইনালের অপর ম্যাচে রংপুর বিভাগের পূর্ব পচাপুকুর প্রাথমিক সরকারি বিদ্যালয় (নীলফামারী সদর) ঢাকা বিভাগের বিনোদপুল কলেজপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে (রাজবাড়ি সদর) হারিয়ে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ট্রফি অর্জন করে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আয়োজিত এই দেশব্যাপী টুর্নামেন্ট-২০২২-তে ৬৫ হাজার ৫২৯টি স্কুল থেকে মোট ১১ লাখ ১৩ হাজার ৯৯৩ জন ছেলে এবং ৬৫ হাজার ৫২৮টি স্কুল থেকে ১১ লাখ ১৩ হাজার ৯৭৬ জন মেয়ে অংশগ্রহণ করে।
প্রধানমন্ত্রী দুটি টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন ও রানারআপ দলের সদস্যদের মাঝে পুরস্কার ও পদক বিতরণ করেন।
এই বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ গোলদাতা জাহিম (৪ গোল) এবং সেরা খেলোয়াড় মনিরুল ইসলাম। তারা দুজনেই পূর্ব পচাপুকুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে প্রাইজমানি, গোল্ডেন বুট ও গোল্ডেন বল গ্রহণ করে।
বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ গোলদাতা বাঞ্ছারামপুর মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী নূর নাহার আকতার ও নালমা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রুমি। তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে প্রাইজমানি, গোল্ডেন বুট ও গোল্ডেন বল গ্রহণ করে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব ফরিদ আহমেদ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
নিজেকে একটি ফুটবল পরিবারের সদস্য অভিহিত করে শেখ হাসিনা বলেন, তার দাদা, বাবা ও ভাই শেখ কামাল ও শেখ জামাল ফুটবল খেলতেন। তিনি বলেন, ‘শেখ কামাল বাংলাদেশে আজকের আধুনিক ফুটবলের স্থপতি। আবাহনী ক্রীড়া চক্র শেখ কামালের হাতেই প্রতিষ্ঠিত।’
শেখ কামাল ও শেখ জামাল ফুটবল ও হকিসহ সব ধরনের খেলাধুলায় জড়িত ছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দেশের ক্রীড়াঙ্গনে শেখ কামালের অবদান আছে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, কামালের স্ত্রী সুলতানা একজন ক্রীড়াব্যক্তিত্ব ছিলেন এবং জামালের স্ত্রী রোজিও খেলাধুলায় পারদর্শী ছিলেন। তিনি বলেন, ‘তাই আমি একটি ফুটবল পরিবারের সদস্য। আমার নাতি-নাতনিরাও ফুটবল খেলতে ভালোবাসে। তারা ফুটবল খেলে। শেখ রেহানার নাতি-নাতনিরাও ফুটবল খেলে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর তার সরকার তৃণমূল পর্যায়ে থেকে ক্রীড়ার উন্নয়নে আন্তস্কুল ক্রীড়া প্রতিযোগিতা শুরু করে। প্রধানমন্ত্রী টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপদের অভিনন্দন জানান।