বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:১৮ পূর্বাহ্ন

ঈদে মিলাদুন্নবীর শিক্ষা ও তাৎপর্য

  • আপডেট সময় সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৫.১৪ এএম
  • ৩ বার পড়া হয়েছে

৫৭০ খ্রিস্টাব্দের ১২ রবিউল আউয়াল, আরবের পবিত্র মক্কা নগরীতে মা আমিনার কোলজুড়ে নেমে এলেন রাহমাতুল্লিল আলামিন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

পারস্যের কবি শেখ সাদী (রহ.) নবীজি সাল্লাল্লাহুর আগমন স্মরণ করে গেয়ে উঠেছেন,

‘বালাগাল উলা বি-কামালিহি,

কাশাফাদ্দুজা বি জামালিহি,

হাসুনাত জামিয়ু খিসালিহি,

সাল্লু আলায়হে ওয়া আলিহি…’

কবিতাটির ভাবার্থ হচ্ছে-

‘সাধনায় যিনি সুউচ্চ মর্যাদায় পূর্ণতায় পৌঁছেছেন

যার সৌন্দর্যের ছটায় বিতাড়িত হয়েছে সমস্ত আঁধার,

সব সচ্চরিত্রের সম্মিলন ঘটেছে যার মাঝে

তবে আসুন দরুদ ও সালাম জানাই তার ও তার বংশধরদের প্রতি।

বিশ্বনবীর আগমনে পুলকিত হয় দুনিয়া। এ আনন্দ মুক্তি ও শান্তির। আনন্দ সাম্য, মৈত্রী, ভ্রাতৃত্ব ও সমমর্যাদার। বিশ্ব যখন অন্যায়, অবিচার, জুলুম ও বহুবিধ কুসংস্কারে নিমজ্জিত ছিল, ঠিক তখনই আল্লাহ তাআলা হিদায়াতের আলোক প্রদীপরূপে পৃথিবীর বুকে পাঠিয়েছেন প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে। তিনি পৃথিবীর বুকে এমন এক সুসভ্য সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন, যা সর্বাঙ্গসুন্দর ও সমুজ্জ্বল আলোক আভায় উদ্ভাসিত। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রাসুল পাঠিয়েছি, যাতে তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো (কল্যাণ ও ন্যায়বিধান মেনে চলো) এবং তাগুত থেকে বেঁচে থাকো।’ (সুরা-১৬ নাহল, আয়াত: ৩৬)।

রবি অর্থ বসন্ত। আউয়াল মানে প্রথম। রবিউল আউয়াল হলো আরবের বসন্তের প্রথম মাস বা প্রথম বসন্ত। রবিউল আউয়াল আরবি হিজরি চান্দ্রমাসের তৃতীয় মাস। প্রকৃতি বসন্তকালে ফুলে-ফলে সুশোভিত হয়। নবজাগরণের সূচনা হয়। পরিবেশ ও প্রতিবেশ সুখের সমীরণে অবগাহন করে। আনন্দের সমুদ্রে আবেগের বান আসে। (লিসানুল আরব)।

রবিউল আউয়াল মাসে এই পৃথিবীতে শুভাগমন করেন মানবতার মুক্তিদূত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হজরত মুহাম্মদ (সা.)। এই মাসে তিনি প্রিয় জন্মভূমি মক্কা মুকাররমা থেকে মদিনা মুনাওয়ারায় হিজরত করেন। রবিউল আউয়াল মাসেই তিনি ইন্তেকাল করেন। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)

রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখের এ দিনটি মিলাদুন্নবী (সা.) নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে। মিলাদুন্নবী (সা.)-এর মূল শিক্ষা মহানবী (সা.)-এর ভালোবাসার, কঠোর সাধনার, দাঁতভাঙা, রক্তঝরা, পরিপূর্ণ ও একমাত্র গ্রহণযোগ্য ধর্ম বা জীবনবিধান ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ রূপে সর্বস্তরে বাস্তবায়নের মাধ্যমে সব আল্লাহদ্রোহী শক্তিকে সম্পূর্ণভাবে পরাস্ত করে ইসলামকে সগৌরবে প্রতিষ্ঠা করা।

মিলাদুন্নবী (সা.)-এর অর্থ নবী (সা.)-এর জন্ম অনুষ্ঠান। ধীরে ধীরে এর সঙ্গে ‘ঈদ’ শব্দ যোগ হয়ে ‘ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)’ রূপ লাভ করে। যার অর্থ মহানবী (সা.)-এর জন্মোৎসব। এ পর্যায়ে আরেকটি পরিভাষাও প্রচলিত হতে থাকে ‘সিরাতুন্নবী (সা.)’ অর্থাৎ নবী (সা.) জীবনচরিত বা জীবনী আলোচনা অনুষ্ঠান। এ দিবসে অনেকে জশনে জুলুশ বা শোভাযাত্রা ও আনন্দ র্যালিও করে থাকেন। মিলাদ শব্দের আভিধানিক অর্থ জন্মলগ্ন, জন্মক্ষণ, জন্ম সম্পর্কে আলোচনা। আমাদের পরিভাষায় মিলাদ বলতে বোঝায় প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম ও জীবনী আলোচনা এবং তাঁর প্রতি দরুদ ও সালাম পেশ করা। কুরআন করিমে রয়েছে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা তাঁর রাসুল (সা.)-এর প্রতি রহমত বর্ষণ করেন, ফেরেশতাগণ তাঁর জন্য দোয়া করেন; হে বিশ্বাসীগণ তোমরা তাঁর প্রতি দরুদ পাঠ ও যথাযথরূপে সালাম পেশ করো।’ (সুরা-৩৩ আহজাব, আয়াত: ৫৬)।

মিলাদুন্নবী (সা.)-এর মূল শিক্ষা কালেমা তাইয়্যেবা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ (আল্লাহ ছাড়া মাবুদ নেই, মুহাম্মদ (সা.) তাঁর প্রেরিত রাসুল)। কালেমার নিগূঢ় অর্থ হাজারও প্রকারে বিশ্লেষণ করা যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ অথচ অতি সংক্ষিপ্ত ও অতি নিখুঁত বিশ্লেষণ হলো- ‘বিশ্বপ্রভু আল্লাহর প্রতি আমি ইমান আনলাম, তাঁর সব আদেশ-নিষেধ মেনে নিলাম।’ (ইমানে মুজমাল) । মিলাদুন্নবী (সা.)-এর মূল শিক্ষা মহানবী (সা.)-এর ভালোবাসার, কঠোর সাধনার, দাঁতভাঙা, রক্তঝরা, পরিপূর্ণ ও একমাত্র গ্রহণযোগ্য ধর্ম বা জীবনবিধান ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ রূপে সর্বস্তরে বাস্তবায়নের মাধ্যমে সব আল্লাহদ্রোহী শক্তিকে সম্পূর্ণভাবে পরাস্ত করে ইসলামকে সগৌরবে প্রতিষ্ঠা করা। এটাই নবী-রাসুল প্রেরণের আসল উদ্দেশ্য। পবিত্র কুরআনে বিবৃত হয়েছে, ‘তিনি সে মহান প্রভু, যিনি রাসুল প্রেরণ করেছেন, সঠিক পন্থা ও সত্য ধর্মসহযোগে; যাতে সে ধর্মকে বিজয়ী করতে পারেন সর্বধর্মের শিখরে, যদিও কাফির-মুশরিকেরা তা অপছন্দ করে।’ (সুরা-৯ তাওবা, আয়াত: ৩৩; সুরা-৬১ ছফ, আয়াত: ৯)।

আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পথ অনুসরণ করতে হবে। অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ (সা.) যা যা করতে বলেছেন, তা করতে হবে, আর যা করতে বারণ করেছেন, তা বর্জন করতে হবে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনের ঘোষণা- ‘রাসুল (সাধারণ) তোমাদের যা দেন, তা তোমরা গ্রহণ করো এবং যা থেকে তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ করেছেন, তা থেকে বিরত থাকো।’ (সুরা: রও হাশর, আয়াত: ৭) ।

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ভালোবাসা ইমানের পূর্বশর্ত। ভালোবাসা প্রকাশ পায় নির্দেশ পালন ও অনুকরণের মধ্যে। কুরআন মাজিদে বলা হয়েছে- ‘(হে রাসুল সা.!) বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও, তবে আমার অনুসরণ করো; (তাহলে) আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন।’ (সুরা-৩ আলে ইমরান, আয়াত: ৩১)।

প্রিয় নবীজি হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, ‘তোমরা কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ মুমিন হবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার পিতা-পুত্র ও যাবতীয় সবকিছুর চেয়ে প্রিয় হব।’ (বুখারি: ১৩ ও ১৪)।

অশান্ত বিশ্বকে শান্তির ছায়াতলে আনতে হলে চাই বিশ্বনবীর আদর্শ অনুসরণ। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ ও শিক্ষা অনুসরণের ফলেই আমরা পেতে পারি মহান আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি। কেননা এর মাঝেই রয়েছে সর্বপ্রকার কল্যাণ।

 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2021 rudrabarta24.net
Theme Developed BY ThemesBazar.Com

sakarya bayan escort escort adapazarı Eskişehir escort