আভ্যন্তরিন কোন্দল ও মত প্রার্থক্যের মধ্য দিয়েই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে আছে বর্তমান নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগ। তারা পুরণ করতে পারেনি শূন্য ৬ পদ। অভিযোগ রয়েছে, ভাগাভাগির কারণে পদগুলো পুরন হয়নি। ফলে তৃণমূলে নানা আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে বর্তমান কমিটি নিয়ে। গত ৫ বছরে উল্লেখ করার মতো সাংগঠনিক কোন কর্মকান্ড দেখাতে পারেনি জেলা আওয়ামীলীগ।
এ নিয়ে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে আছে আব্দুল হাই ও ভিপি বাদলের নেতৃত্বাধীন জেলা আওয়ামীলীগ। বিভিন্ন সময়ে জেলা আওয়ামীলীগের বিরোধ প্রকাশ্যে এসেছে নানা ইস্যুতে। দুই ধারায় বিভক্ত জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ একাধিক নেতা পত্রিকার শিরোনাম হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনের বাতাস বাইতে শুরু করেছে নেতাকর্মীদের মাঝে। ডিসেম্বরে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সম্মেলনের আগেই অনুষ্ঠিত হবে জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন। আর সেটা হতে পারে অক্টোবরের তৃতীয় বা শেষ সপ্তাহে। ফলে আগামী সম্মেলনে কারা আসছে জেলা আওয়ামীলীগের নতুন নেতৃত্বে এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা।
এদিকে সম্মেলন ঘিরে পদ প্রত্যাশী নেতারা কেন্দ্রীয় নেতাদের আস্থা অর্জনের প্রচেষ্টায় মাঠে নেমে পড়েছেন। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগও জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে কারা আসবেন সেই সকল নেতাদের নানাভাবে পর্যবেণে রেখেছেন বলেও জানা যায়। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এবার জেলা আওয়ামীলীগের শক্তিশালী নেতৃত্ব তৈরী করার ল্েয নানা দিক বিবেচনা করে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা হবে বলে জানা যায়।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সভাপতি পদে আলোচনায় রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই ও মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন। সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনা রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু, জেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এড. আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদল ও আওয়ামীলীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য এড. আনিসুর রহমান দীপু।
সূত্রমতে, ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর দলের হাইকমান্ড জেলা আওয়ামীলীগের আংশিক কমিটি ঘোষনা করেন। কিন্তু শুরু থেকে অদ্যাবধি এক হতে পারেনি ৭৪ সদস্যের ঘোষিত জেলা কমিটির ৬৮ নেতা। জেলা আওয়ামীলীগের ব্যানারে নারায়ণগঞ্জে আগমন ঘটেনি কোন কেন্দ্রীয় নেতার। বরং প্রকাশ্যে দুই ধারায় বিভক্ত জেলা আওয়ামীলীগ।
জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলার সর্বশেষ কাউন্সিল হয় ১৯৯৭ সালের ২০ ডিসেম্বর। অধ্যাপিকা নাজমা রহমান সভাপতি ও এমপি শামীম ওসমান সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন। এর পর ২০০২ সালের ২৭ মার্চ নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এস এম আকরামকে আহŸায়ক করে কেন্দ্র থেকে ৬১ সদস্যের একটি আহŸায়ক কমিটি করে দেওয়া হয়। পরে ২০১১ সালে নাসিক নির্বাচনের পর আকষ্মিকভাবে আহŸায়কের পদ থেকে এস এম আকরাম পদত্যাগ করে যুক্ত হন নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে। পরে ভারপ্রাপ্ত আহŸায়ক করা হয় যুগ্ম-আহŸায়ক মফিজুল ইসলামকে। কিন্তু ২০১৪ সালের ১১ ফেব্রæয়ারি মফিজুল ইসলাম মারা যান। ফলে দীর্ঘ ১৪ বছর জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি উপহার দিতে পারেনি এস এম আকরাম ও মফিজুল ইসলাম।
এদিকে মফিজুল ইসলামের মৃত্যুর পর পর দুই বছর আট মাস কান্ডারীবিহীন থাকে জেলা আওয়ামীলীগ। পরে ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের তাৎকালীন প্রশাসক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাইকে সভাপতি এবং সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে সিনিয়র সহ-সভাপতি ও এড. আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদলকে সাধারণ সম্পাদক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট জেলা আওয়ামীলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্র।
এর ১৩ মাস পর ২০১৭ সালের ২৫ নভেম্বর ৬টি পদ শূন্য রেখে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ৭৪ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্র। কিন্তু ৫ বছরেও পূরণ হয়নি শূণ্য পদগুলো। অভিযোগ রয়েছে, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি, সিনিয়র সহসভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে ৬টি পদ ভাগাভাগি নিয়ে শেষ পর্যন্ত তার আর পুরণ হয়নি।
এদিকে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা আওয়ামীলীগ সম্পন্ন করেছে, রূপগঞ্জ, আড়াইহাজার, বন্দর, ফতুল্লা ও সর্বশেষ সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন। বাকী রয়েছে নারায়ণগঞ্জ সদর থানা আওয়ামীলীগের সম্মেলন।
দলীয় সূত্রমতে, মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা আওয়ামীলীগের কমিটি দিয়েই চলছে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম। তৃণমূলে বেহাল অবস্থা। ফলে দীর্ঘদিন দল মতায় থাকায় ‘মতা’ কুগিত করার সুযোগ পাচ্ছেন একশ্রেণির নেতা। এ কারণে অভ্যন্তরীণ দ্ব›দ্ব-কোন্দল বেড়েই চলেছে।
ৎআওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জেলা, উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটির মেয়াদ তিন বছর। ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের মাধ্যমে দলের কাউন্সিলররা তাঁদের নেতা নির্বাচন করবেন।
কিন্তু অনেক কমিটির মেয়াদ তিন বছরের জায়গায় চার-পাঁচ বছর কিংবা এরও বেশি হয়ে গেছে। আগামী সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি হবে এবং দল সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হবে এমন প্রত্যাশা নেতাকর্মীদের। সূত্র: নারায়ণগঞ্জ টাইমস