মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ০৪:৩৪ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

আদানিকে ১৬০০ মেগাওয়াটের পুরোটাই দিতে বলেছে বাংলাদেশ

  • আপডেট সময় বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ১০.২১ এএম
  • ২৭ বার পড়া হয়েছে

ভারত থেকে আদানি পাওয়ারের ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদনের পুরোটাই সরবরাহ করতে বলেছে বাংলাদেশ। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছেন। এর আগে, টানা তিন মাসের বেশি সময় ধরে আদানি বাংলাদেশে ঝাড়খ-ের গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সক্ষমতার খুব সামান্যই সরবরাহ করছিল।

মূলত বাংলাদেশে শীতকালে বিদ্যুতের কম চাহিদা ও বকেয়া পরিশোধের জটিলতার কারণে সরবরাহ অর্ধেক করা হয়েছিল। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার আমলে ২০১৭ সালে আদানির সঙ্গে ২৫ বছর মেয়াদি চুক্তি করে বাংলাদেশ। সেই চুক্তির আওতায় আদানি গ্রুপ তার ২ বিলিয়ন ডলারের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছে। ভারতের ঝাড়খ- রাজ্যে অবস্থিত এই কেন্দ্র ৮০০ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিট নিয়ে গঠিত এবং কেবল বাংলাদেশেই বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। বৈদেশিক মুদ্রার সংকটে পড়ার কারণে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিল পরিশোধে বিলম্ব হলে গত ৩১ অক্টোবর আদানি বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেকে নামিয়ে আনে। এর ফলে ১ নভেম্বর গোড্ডার একটি ইউনিট বন্ধ হয়ে যায় এবং পুরো বিদ্যুৎকেন্দ্রটির মাত্র ৪২ শতাংশ সক্ষমতায় পরিচালিত হয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশ আদানিকে জানায়, কেবল অর্ধেক বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখা হবে আপাতত।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) জানিয়েছে, তারা আদানির বকেয়া পরিশোধের জন্য প্রতি মাসে ৮৫ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করছে এবং এখন দ্বিতীয় ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরায় চালুর নির্দেশ দিয়েছে।
এ বিষয়ে পিডিবির চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম বলেন, আমাদের বর্তমান চাহিদা অনুযায়ী, তারা গতকাল সোমবার দ্বিতীয় ইউনিটটি পুনরায় চালু করার পরিকল্পনা করেছিল, কিন্তু উচ্চমাত্রার কম্পনের কারণে তা সম্ভব হয়নি।

তিনি বলেন, আমরা বর্তমানে প্রতি মাসে ৮৫ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করছি। আমরা আরও পরিশোধের চেষ্টা করছি এবং আমাদের উদ্দেশ্য হলো বকেয়া কমানো। এখন আদানির সঙ্গে বড় কোনো সমস্যা নেই। পিডিবি ও আদানির কর্মকর্তাদের গতকাল মঙ্গলবার ভার্চুয়াল বৈঠকে বসার কথা আছে। এ বৈঠকটি মূলত কিছুদিন আগে হয়ে যাওয়া একটি বৈঠকের ধারাবাহিকতা। উভয় পক্ষের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছে বলে এক সূত্র জানিয়েছে। আদানি পাওয়ারের এক মুখপাত্রের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে রয়টার্সের অনুরোধের জবাব দেননি তিনি।

গত বছরের ডিসেম্বরে আদানির এক সূত্র জানিয়েছিল, পিডিবির কাছে কোম্পানি প্রায় ৯০০ মিলিয়ন ডলার পায়। তবে মো. রেজাউল করিম সে সময় বলেছিলেন, বকেয়ার পরিমাণ ছিল প্রায় ৬৫০ মিলিয়ন ডলার।
দুই পক্ষের মধ্যে মূল বিরোধ মূলত বিদ্যুতের মূল্য নির্ধারণ নিয়ে। যেখানে ২০১৭ সালের চুক্তিতে দুটি সূচকের গড়ের ভিত্তিতে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আদানির বিদ্যুতের খরচ বাংলাদেশে ভারতের অন্যান্য বিদ্যুতের তুলনায় গড়ে ৫৫ শতাংশ বেশি।

বাংলাদেশের আদালত আদানির সঙ্গে করা চুক্তি পরীক্ষা করতে বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে। এই কমিটির প্রতিবেদন চলতি মাসেই আসার কথা। এটি চুক্তির নতুন করে আলোচনা ও পরিবর্তনের পথ খুলে দিতে পারে।

গত বছর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার আদানিকে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত করেছিল। কারণ, আদানি ভারতের দিল্লি থেকে ঝাড়খ- প্ল্যান্টের জন্য প্রাপ্ত কর রেয়াতের সুবিধা বাংলাদেশকে দেয়নি। ডিসেম্বরে রয়টার্স এ সংক্রান্ত নথির বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছিল। বাংলাদেশি কর্মকর্তারা তখন বলেছিলেন, তারা চুক্তিটি পর্যালোচনা করছেন।

তবে আদানির এক মুখপাত্র সে সময় বলেছিলেন, কোম্পানিটি বাংলাদেশের সঙ্গে করা সব চুক্তিগত বাধ্যবাধকতা পালন করেছে এবং ঢাকার পক্ষ থেকে চুক্তি পর্যালোচনা করা হচ্ছে-এমন কোনো ইঙ্গিত তারা পাননি। তবে আদানির সঙ্গে পিডিবির মতপার্থক্য নিরসন হয়েছে কিনা সে বিষয়ে কোনো তথ্য দেননি পিডিবির চেয়ারম্যান।
উল্লেখ্য, গত বছরের নভেম্বরে মার্কিন কৌঁসুলিরা আদানি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা গৌতম আদানি ও আরও সাতজন নির্বাহীকে ২৬৫ মিলিয়ন ডলারের ঘুষ কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত করেন। আদানি গ্রুপ মার্কিন অভিযোগগুলোকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে অভিহিত করেছে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2021 rudrabarta24.net
Theme Developed BY ThemesBazar.Com

sakarya bayan escort escort adapazarı Eskişehir escort