নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বলেছেন, গত পরশু (বৃহস্পতিবার) জাতির পিতার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে একটা ভাষণ দিয়েছেন। সেখানে তিনি অনেক কিছুর ইঙ্গিত দিয়েছেন। সামনে আমাদের চরম কঠিন পরীক্ষা পার করতে হবে। আমাদের দায়িত্ব এই মেসেজটা সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া’।
শনিবার (২৯ জানুয়ারি)ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের পাশে নম পার্কে আয়োজিত আওয়ামীলীগের এক কর্মীসভায় তিনি এ কথা বলেন।
শামীম ওসমান বলেন, একটা নির্বাচন হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ সিটির নির্বাচন আসলেই খেলা শুরু হয়ে যায়। ২০১১ ও ২০১৬ তে এবং এবার কী করেছি তা আমি জানি। বলব না কারণ দলকে ভালোবাসি। রাজনীতিতে আঘাত পেয়েছি কিন্তু কষ্ট পাইনি। কবরস্থানে যা হয়েছে তা কোনো সন্তান মানতে পারে না। নেত্রী আমাকে বলেছিলেন আমি সব বিষ হজম করি আমি নীল কন্ঠী। আমাকে আঘাত করে কথা বললেও আমি কিছু বলি না। কারণ আমি আমার নেত্রীর মত হতে চাইছি। এটা খুব কষ্টের, আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল। আমার স্ট্রেস অ্যাটাকও হয়েছিল। আমি আমার বাবা-মা ও ভাইকে ভালোবাসি। আমি বলেছিলাম গোপনেও হলেও তাদের বলেন আল্লাহর কাছে মাফ চাইতে। শয়তান আর ফেরেশতা ছাড়া সবাই ভুল করে। তাও হয়নি, তাই কষ্টটা আরও বেড়ে গেছে।
শামীম ওসমান আরও বলেন, আমার বাবা মৃত্যুর আগে আমাদের তিন ভাইয়ের হাত শেখ হাসিনার হাতে তুলে দিয়ে বলেছিলেন ওরা যদি বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে গিয়ে মরেও যায় তাহলে তাই হোক। আমার মা আমাকে একটা কথা বলেছিলেন নামাজ পড়ো, নেত্রী শেখ হাসিনার সামনে অনেক কথা বলছিলাম। তিনি বলেছিলেন হতাশ হলে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জীবনী পড়বা। বড় ভাই নাসিম ওসমান বলেছিলেন আল্লাহকে চেনার চেষ্টা করো। আমি বুঝতে পারিনি চিনবো কীভাবে। পরে আমি বুঝেছি এভাবে চেনা যায় আল্লাহকে। সব ধর্ম সুন্দর কোন ধর্ম মানুষকে খারাপ শিক্ষা দেয় না। তারা সম্মান করতে জানে।
তিনি বলেন, আমি প্রেস কনফারেন্স না করলে সমস্যা হত। একটা পক্ষ মাঠে নেমেছিল, কারা এরা। কেউ কেউ লেখে দল আমাকে দিয়ে তৈমূর ভাইকে কিছু প্রমাণ করার জন্য দাঁড় করিয়েছে। কেউ আমাকে এ নির্দেশনা দেয়নি। তবে, লেখা হচ্ছে এটা ইচ্ছা করে করা হচ্ছে। এত নিচু লেভেলের চিন্তা আমার নেত্রীর নেই। রাজনীতিতে কিছু নোংরামি আছে। নারায়ণগঞ্জ অনেক গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। সামনে আমার জানামতে প্রচন্ড বড় আঘাত আসছে দেশের ওপরে। কে বাঁচাতে পারে ওপরে সৃষ্টিকর্তা আর নিচে শেখ হাসিনা। যত আঘাত আসছে তিনি নিজের ওপর নিচ্ছেন। তার ওপর যখন গ্রেনেড হামলা হলো তখন মানবাধিকার কোথায় আছে। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা বিদেশে আশ্রয় নেয় তখন কোথায় মানবাধিকার। এখানে অনেকের ভেতরে রক্তক্ষরণ আছে। সময় আসছে আমাদের লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হতে হবে। তারা যুদ্ধ করেছিল দেশটাকে স্বাধীন করার জন্য। আন্তর্জাতিক রাজনীতি চলছে। হয়তো আগামী এক-দুই মাসে একটা আঘাত করার চেষ্টা হবে। তারা জিততে পারবে না কারণ নেত্রীর ওপর আল্লাহর রহমত আছে। আমার ভেতরেও রক্তক্ষরণ হয়েছে। আমি জানি, ইচ্ছা করলে কী করতে পারি। আমি জবাব দেওয়ার ক্ষমতা রাখি। প্রচণ্ড কষ্ট লেগেছে মনে।
নারায়ণগঞ্জের মেধাবী ছাত্র ত্বকী হত্যা নিয়ে শামীম ওসমান বলেন, আর একটা দাবি জানাতে চাই সাংবাদিক ভাইয়েরা আপনাদের মাধ্যমে। কিছু দিন পর থেকে শুরু হবে আবার দশ জন দাড়াবে তিনজন শুনবে, দশ জন বক্তা আর তিনজন শ্রোতা। গত পাঁচ সাত বছর ধরেই চলতেছে ত্বকি হত্যার বিচার চাই। আজকে আমি সরকারকে জানাতে চাই, স্ব-রাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানাতে চাই, আমি দেশের আইন বিভাগকে বলতে চাই এই ত্বকী হত্যা নিয়ে কেউ কেউ আমাকে আর আমার পারবারের দিকে আঙ্গুল দেখাতে চান। আমি বলতে চাই অবিলম্বে এর বিচার করা হোক। প্রয়োজনে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি করে বিচার করা হোক। আমি দাবি তুলছি এই হত্যার বিচার হওয়ার জন্য। আমি জানি নারায়ণগঞ্জে এই কথা বলে সস্তা জনপ্রিয়তা নিতে চান। তাই আজকে দাবি করছি এই হত্যার বিচার করা হোক। পাশাপাশি শহরের দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই। আমরা নারায়ণগঞ্জে কারও পায়ে ভর দিয়ে রাজনীতি করি না। আমাদের নেতা একজনই শেখ হাসিনা। বাকি আর কাউকে নেতা হিসেবে গোনায় ধরি না। হুমায়ুন রবিউলকে সরিয়ে দিতে পারে। কিন্তু শেখ হাসিনার কর্মী হওয়া থেকে কেউ সরিয়ে দিতে পারবে না। যাদের অসম্মান করা হয়েছে লোকজন কড়তালি দিয়ে সম্মান প্রদর্শন করবে তাদের।
এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহিদ মো: বাদল, সাংগঠনিক সম্পাদক মীর সোহেল আলী, মহানগর আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি চন্দন শীল, সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা, যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজাম, ফতুল্লা থানা আওয়ামলীগের সভাপতি সাইফ উল্লাহ বাদল, সাধারণ সম্পাদক শওকত হোসেনসহ আওয়ামীলীগ ও সহযোগি সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী।